পবিত্র কুরবানী উপলক্ষে উম্মতের দায়িত্ব কি?
সমস্ত প্রশংসা যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ মুবারক ও সালাম মুবারক।
কুরবানী কি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- কুরবানী হচ্ছে আপনাদের পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত সুন্নত মুবারক। (সূরা ছফফাত ১০০-১১০)
মূলত, পবিত্র কুরবানী এক মহিমান্বিত ইবাদত। পবিত্র কুরবানী উপলক্ষে একজন উম্মতের দায়িত্ব কি অর্থাৎ আমাদের কি দায়িত্ব আসুন জেনে নেয়া যাক
পবিত্র হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, একবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এমন একটি শিংওয়ালা দুম্বা আনতে যা কালোতে হাঁটে, কালোতে শোয় ও কালোতে দেখে অর্থাৎ যার পা, পেট ও চোখ সবই কালো। অতঃপর কুরবানী দেয়ার উদ্দেশ্যে উনার জন্য এরূপ একটি দুম্বা আনা হলো। তখন তিনি বললেন, হে হযরত উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! ছুরিটি দিন! অতঃপর বললেন, পাথরে তা ধারালো করুন। হযরত উম্মুল মু’মিনীন ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম বললেন, আমি তা করলাম। অতঃপর তিনি তা গ্রহণ করলেন এবং দুম্বাটিকে ধরলেন তারপর পার্শ্বদেশ করে শোয়ালেন এবং যবেহ করতে গিয়ে বিসমিল্লাহ বললেন আরো বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি এই কুরবানী কবুল করুন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার তরফ থেকে এবং উনার সম্মানিত পরিবারের তরফ থেকে এবং উনার উম্মতদের তরফ থেকে। অতঃপর উক্ত দুম্বাটি দ্বারা সকালের খাবার খাওয়ালেন।” (মুসলিম শরীফ- কুরবানী অধ্যায়: হাদীস নম্বর ১৯৬৭ , আবূ দাঊদ শরীফ- কুরবানী অধ্যায়: হাদীস ২৭৯২)
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি কুরবানীর সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নামাযের পর) খুতবা শেষ করলেন এবং মিম্বর শরীফ থেকে নেমে আসলেন এরপর উনার জন্য একটি দুম্বা আনা হলো। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত মুবারকে সেটা যবেহ করলেন এবং বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বললেন অর্থাৎ বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলে যবেহ করলেন। আরো বললেন, এই কুরবানী আমার তরফ থেকে এবং আমার ঐ সকল উম্মতের তরফ থেকে যারা কুরবানী দেননি অর্থাৎ যাদের কুরবানী করার সামর্থ নেই। (আবূ দাঊদ শরীফ- কুরবানী অধ্যায় : হাদীস ২৮১০ , তিরমিযী শরীফ ১৫২১)
তাবিয়ী হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত আলী কাররামাল্লাহু রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে দু’টি দুম্বা কুরবানী করতে দেখে উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম ইহা কি? অর্থাৎ দু’টি কেন? তিনি বললেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ওছীয়ত মুবারক করেছেন, আমি যেনো উনার পক্ষ হতে কুরবানী করি। সুতরাং আমি উনার পক্ষ হতে অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পক্ষ থেকে একটি কুরবানী করছি। (আর অপরটি আমার পক্ষ থেকে)। (আবূ দাঊদ শরীফ – কুরবানী অধ্যায় : ২৭৯০, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত হাদীস শরীফ থেকে যে বিষয়গুলো বোঝা গেলো,
১) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মতদের জন্য কুরবানী করেছেন।
২) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সামর্থহীন উম্মতের জন্য কুরবানী করেছেন।
৩) সর্বোপরি স্বয়ং নিজের জন্য কুরবানী করতে ওসীয়ত করেছেন।
তাহলে আমাদের করনীয় কি ?
আমাদের ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে কুরবানী করা।
একটি কুরবানীর পশুতে সাত নাম হয়। প্রথম নামটা যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হয় তবে সেই মুবারক ওসীয়তও পালন হলো সেই সাথে কুরবানীটাও নিশ্চিত কবুল হবে।
আল্লাহ পাক আমাদের কবুল করুন। (আমিন)
-আল্লামা মুহম্মদ আহনাফ : লেখক ও গবেষক