ফেনীতে নির্মাণাধীন রেলওয়ে ওভারপাসের কারণে মহাসড়কে নিত্য যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে

দেশের লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর অংশে ফতেহপুর রেলক্রসিংয়ে নির্মাণাধীন রেলওয়ে ওভারপাসের কারণে প্রায় প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী শত শত যাত্রীবাহী বাস,মালবাহী কাভার্ডভ্যান, লরি ও ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে থাকে।
যানজটের কারণে যাত্রী ও বাস মালিকদের যেমন সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। তেমনই প্রতিদিন ব্যবসায়ীদেরও কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। ইয়াওমুল জুমুয়া (শুক্রবার) (১১ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফেনীর ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারপাস এলাকায় তীব্র যানজট চিত্র দেখা গেছে।
এ সময় যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক, বাস মালিক এবং ব্যবসায়ীরা জানান, ইয়াওমুল জুমুয়া (শুক্রবার) দুপুর পর্যন্ত ফেনী থেকে চট্টগ্রামের মীরশ্বরাই, অন্যদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত পঞ্চাশ কিলোমিটারজুড়ে যানবহন জ্যামে আটকা পড়ে আছে।
ফতেহপুর ওভারপাস এলাকায় জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই (অ্যাডমিন) মীর গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিমকে যানজট নিরসনে কাজ করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে টিআই গোলাম ফারুক বলেন, ‘নির্মাণাধীন ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারপাসের পাশের রাস্তায় বিশটির মতো ছোট-বড় খানাখন্দ রয়েছে। ফেনী শহরের পুরাতন অ্যাপ্রোচ সড়কটি মেরামত না হওয়ায় ওই পথে কোনও গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। এছাড়া, ফতেহপুরে রেলক্রসিং দিয়ে ট্রেন চলাচলের জন্য চব্বিশ ঘণ্টায় ৪৬ বার সড়ক বন্ধ করে ফের চালু করতে হয়। ফলে ক্রসিংয়ে একটি গাড়ি পার হতে বিশ মিনিটের মতো সময় লাগে ।’
তিনি জানান,ফেনী পুলিশ সুপারের নির্দেশে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যানজটে আটকে থাকা গাড়িগুলো মুক্ত করতে দিনরাত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
স্টার লাইন পরিবহন গ্রুপের পরিচালক মাঈন উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘দিন দিন এখানে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।ইয়াওমুল জুমুয়া (শুক্রবার) (১১ মে) ঢাকা থেকে সকাল আটটায় ছেড়ে আসা তাদের বাসগুলো বেলা দু’টা পর্যন্ত যানজটে আটকা পড়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম থেকে একই সময়ের ছেড়ে আসা বাসগুলো মীরশ্বরাই এলাকায় আটকা পড়ে আছে।’
তিনি বলেন, ‘যানজটের কারণে প্রতিদিন পরিবহন ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। ’
সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন পরিবহনের চালক, হেলপার, যাত্রী ও স্থানীয়রা জানান, ফতেহপুরে মাত্র একলেনের রাস্তার কারণে এই অংশে যান চলাচলে সীমাহীন যানজটের সৃষ্টি হয়। আবার ট্রেন আসা-যাওয়ার সময় যানবাহন চলাচল আটকে দেওয়া হয়। ফলে দু’পাশে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে।
রেললাইন পার হতে এমনিতেই গাড়ি ধীর গতিতে চালাতে হয়, জানালেন গ্রিনলাইন পরিবহনের চালক মমতাজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘তার ওপর সরু রাস্তায় একাধিক গাড়ি পার হতে অনেক সময় লেগে যায়।’
ফেনী চেম্বার অব কমাসের সভাপতি শিমুল রেজা বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে যানজটের কারণে বন্দরমুখী শত শত মালবাহী কাভার্ডভ্যান, লরি ও ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে। নির্ধারিত সময়ে মালামাল বন্দরে না পৌঁছায় বিদেশে শিপমেন্ট দিতে পারছে না গার্মেন্টসহ বিভিন্ন রফতানিমুখী পণ্যের মালিকরা। যানজটের কারণে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহর ব্যবসায়ী সমিতির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মুসফিকুর রহমান পিপুল বলেন, ‘নিত্য যানজটের কারণে ফেনী বাজারে পণ্যবাহী যানবাহন সঠিক সময়ে পৌছাঁতে না পারায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে পরিবহন ভাড়াও দ্বিগুণ গুনতে হয়। ফলে পাইকারি বাজারে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে।
পরিবহন চালকরা অভিযোগ করেন, রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যথাযথ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেনি। বাইপাস সড়কসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন না করেই তারা নির্মাণ কাজ শুরু করে। শুষ্ক মৌসুমে ধুলিঝড়,বর্ষায় কাদা আর পানিতে একাকার হয়ে যায় সড়কটি। ফলে যানজট এখানকার নিত্যকার সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Facebook Comments Box

















