খামিছ (বৃহস্পতিবার), ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

শুধু অর্থ ব্যয়ের চিন্তা থেকে প্রকল্প নয়: প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক: সরকারি অর্থ অপচয় না করে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুষ্ঠানে তিনি এ নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রকল্প প্রণয়নটা শুধু অর্থ ব্যয়ের চিন্তা থেকেই যেন না হয়। সেখান থেকে কতটুকু দেশের উন্নতি হবে আর এর সুফল মানুষ কতটুকু পাবে সে হিসাবটাই আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

“সেই সাথে সাথে আমাদের এই কষ্টার্জিত অর্থ- এটার যেন অপব্যবহার না হয়।”

বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেই সক্ষমতা আমরা আর্জন করেছি। এতে আমাদের নিজেদেরও একটা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এ অর্থটা আমাদের, এটা যেন অপচয় না হয়।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একসময় প্রচলিত ছিল সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল। এই চিন্তা থেকে দেশের মানুষকে সরিয়ে আনতে হবে।

“দেশের মানুষকেও ভাবতে হবে যে, সরকারের মাল হচ্ছে জনগণের। এটা জনগণেরই সম্পদ, জনগণেরই কল্যাণে কাজ হবে, ব্যয় হবে। এটা দরিয়াতে ঢালার জন্য না।”

শেখ হাসিনা মনে করেন, উন্নত জীবনের জন্য মানুষকে আগামী দিনের স্বপ্ন দেখতে হবে। হাহাকারের বদলে সবসময় তাদের (মানুষ) ভেতরে একটা চেতনা জাগ্রত রাখতে হবে। তবেই উন্নয়নের কাজটা তরান্বিত হবে।

দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি ছাড়া উন্নতি অসম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, তার নেতৃত্বাধীন সরকার পঞ্চবার্ষিকী ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনার মত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনা এসময় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, জীবনমানের উন্নতি, সাক্ষরতা হার বৃদ্ধি, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, বাজেট বৃদ্ধি, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের কাতারে পৌঁছানোসহ দেশের অগ্রগতির চিত্রও তুলে ধরেন।

“এই এগিয়ে চলাটা যেন কোনোমতেই থেমে না যায়। সেটাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কার্যক্রম নিচ্ছি।”

বাংলাদেশকে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করলে এ অর্জন কঠিন কাজ নয়। সেটা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছি।

বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে জড়িতদের ‘আরেকটু কষ্ট করতে হবে, খাটতে হবে ও শ্রম দিতে হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এসময় গত অর্থবছরে সাত ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জনে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার জন্য সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি কাজে আরও ‘গতিশীলতা’ আনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশকে উন্নত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের কাজের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যে দলটা তৃণমূলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিন্তা করে গঠিত হয় এবং মানুষের জন্য কাজ ও ত্যাগ করতে পারে, তাদের চিন্তা-ভাবনা সবসময় একটু ভিন্নতর থাকে।

“আর হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসে ক্ষমতা গ্রহণ করলে তাদের চিন্তা-ভাবনাটা সম্পূর্ণ অন্যরকম থাকে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কারও কাছে ক্ষমতা হচ্ছে ভোগের বস্তু। আর কারও কাছে ক্ষমতা হচ্ছে কর্তব্য পালন করা। আমাদের হচ্ছে জাতির প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্য পালন করা।”

এ নিয়ে তৃতীয় বারের মত কর্মসম্পাদন চুক্তি হল।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে প্রথমবারের মত এপিএ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাশাপাশি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর সঙ্গেও এই চুক্তি হয়।

অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানান, সব মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বিভাগ ছাড়াও এবার নতুন করে এ চুক্তির আওতায় এসেছে বিভাগীয়, আঞ্চলিক ও জেলার অফিসগুলো।

কর্মসম্পাদন চুক্তির মাধ্যমে দক্ষতা ও কাজের অগ্রগতির মূল্যায়ন ছাড়াও কর্মসম্পাদনে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Facebook Comments Box