সাবত (শনিবার), ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ড্রাগন চাষে সফল সুরত আলী

ড্রাগন চাষে সফল সুরত আলী

ঝিনাইদহ সংবাদদাতা: কর্মে আন্তরিক থাকলে যে কোন উদ্যোগে সফলতা পাওয়া যায়। সেরকমই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সুরত আলী । তিনি একজন ফলচাষি। মাত্র চার বছরে পেয়েছেন অভাবনীয় সফলতা। গতানুগতিক ফসল চাষের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে নতুন নতুন ফলের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সুরত আলী। তার চাষ পদ্ধতি আর সফলতায় তিনি এলাকার কৃষকদের মাঝে হয়ে উঠেছেন আদর্শ এক অনুকরনীয় কৃষক।

সুরত আলী ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার শিবনগর গ্রামের মনিরুদ্দীন মন্ডলের ছেলে। ২০০৭ সাল। ওই বছরের অক্টোবর মাসে মাত্র এক একর জমিতে ৭০০ খুটিতে ড্রাগনের চারা রোপনের মধ্যে দিয়ে বিদেশি ফলের চাষ শুরু করেন। মাত্র এক বছর পরেই ড্রাগন চাষে সফলতা ধরা দিতে থাকে।

সফলতার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে চার বছরের ব্যবধানে এখন তার প্রায় ১০ একর জমিতে পাঁচ হাজার খুটিতে ড্রাগন চাষ রয়েছে। এছাড়া প্রায় চার একর জমিতে রয়েছে ভিয়েতনামের শরিফা, আরব খেজুর, কফি, এ্যাভোকোডা, মালটা, বিভিন্ন দেশি বিদেশি আম ও উন্নত জাতের লিচুর চাষ। এসব নানা প্রজাতির দেশি বিদেশী ফলের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন বাণিজ্যিক ফলের বাগান। যেখানে নিয়মিত প্রায় ১০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তার বাগান থেকে বছরে খরচ বাদে লাভ হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। তার বিশাল মাঠ জুড়ে গড়ে তোলা দৃষ্টিনন্দন এই বাগান দেখতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন কৃষি কর্মকর্তারা তার বাগান পদির্শন করছেন।

সুরত আলী জানান, আমার স্বপ্ন ছিল ড্রাগনসহ বিদেশি ফলের সাজানো গোছানো এক বাগান গড়ে তুলবো। তাই ২০০৭ সালের অক্টোবরে এক একর জমিতে ড্রাগনের চাষ করি। মাত্র এক বছরের মাথায় স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়। সফলতা আসতে শুরু করে। দ্বিতীয় বছর ধারনার থেকে অনেক বেশি ফল আসে, যা বিক্রি করে বেশ লাভ হয়। ফলে এ চাষ আরো বৃদ্ধি করি। বর্তমানে আমার ড্রাগনসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে বাগান গড়ে তুলেছি।

প্রথমে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। সেখান থেকে ১৮ মাস পরে ফল আসা শুরু হয়। এখন বাগানে ৫ হাজার খুটি আছে। এরমধ্যে চার হাজার খুটিতে ফল আসছে। সেখানে প্রতি বছর প্রায় দুই কোটি টাকার ফল বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চারা বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার। এরমধ্যে শ্রমিক, সার ও ব্যবস্থপনায় খরচ হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা। যেখানে নিয়মিত প্রায় ১০জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

তিনি আরো জানান, ড্রাগন একটি বহুবর্ষজিবী টেকসই ফল। খুটি পদ্ধতিতে একটি খুটিতে চারটি চারা রোপণ করতে হয়। রোপনের পর ফল আসতে সময় লাগে মোটামুটি ১৮ মাস। ফল আসা পর্যন্ত খুটি প্রতি খরচ পড়ে গড়ে এক হাজার টাকা। একটি খুটিতে এক বছরে গড়ে পঁচিশ থেকে তিরিশ কেজি ফল উৎপাদিত হয় যার বাজার মূল্য গড়ে দুইশত টাকা কেজি হলেও পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা হয়। ড্রাগন ফলের মৌসুম শুরু হয় এপ্রিল মাস হতে আর একটানা নভেম্বর মাস পর্যন্ত কয়েক দফায় ফল আসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মাথায় ড্রাগন তোলা যায়। এক নাগাড়ে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস ফল সংগ্রহ করা যায়। ড্রাগন গাছে মূলত জৈব সার ও সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার এবং পিপড়া দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শিকদার মোহায়মেন আক্তার জানান, সুরত আলীর ফল চাষ পদ্ধতি প্রসংসার দাবি রাখে। বিদেশি ফল ড্রাগন লাভজনক হওয়ায় অনেকে এখন সুরত আলীর কাছ থেকে চারা নিয়ে রোপন করছে। তিনি জানান, ক্যাকটাস গোত্রের এই ফলের গাছ দেখে সবাই একে সবুজ ক্যাকটাস বলেই মনে করেন। সাধারণত মধ্য আমেরিকায় এ ফল বেশি পাওয়া যায়। ড্রাগন ফল দেখতেও খুব আকর্ষনীয়। এর স্বাদ হালকা মিষ্টি। আমেরিকাসহ এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশে বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন ফল চাষ হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলে ক্যালোরি খুব কম থাকায় এ ফল ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য ভালো। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে। যে কারনে শরীরের চর্বি কমায় ও রক্তের কোলেস্টেরল কমানোসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। সফল চাষী সুরত আলীর বাগান তৈরিতে কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

Facebook Comments Box