তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা: নিহত ৬০, আটক ৭৫৪ সেনা সদস্য
আরএফএন ডেস্কঃ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালানো হয়েছে। কার্যত ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক ব্যক্তি। এ ছাড়া ৭০০ অস্ত্রধারী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খবর বিবিসি ও সিএনএন।
শুক্রবার (১৫ জুলাই) রাতের সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শনিবার ভোরে প্রেসিডেন্টের সমর্থনে দেশটির হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, কার্যত সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। যাদও অভ্যুত্থানকারীরা ‘ক্ষমতার দখল’ নিতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
ইস্তাম্বুলে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এরদোয়ান বলেন, ‘সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা শেষ। সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
তিনি সেনাঅভ্যুত্থানকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ উল্লেখ করে সেনাবাহিনীতে শুদ্ধি অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপির এক খবরে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থান চেষ্টার প্রেক্ষিতে দেশটিকে নতুন ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে নাম জানানো হয়নি।
সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার মুখে প্রেসিডেন্ট তাইয়েব এরদোগান অবকাশ যাপন থেকে ইস্তাম্বুলে ছুটে আসেন। বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভ্যুত্থানকে দেশদ্রোহিতা আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘যারা এর পেছনে ছিলেন তাদের বড় ধরণের মূল্য দিতে হবে।’
তিনি জানান, অভ্যুত্থানে জড়িত কয়েকজন অফিসারকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেছেন, ‘পরিস্থিতি এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। রাজধানী আঙ্কারার আকাশে বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
বিদ্রোহীদের পক্ষে উড্ডয়নকারী যে কোনো বিমানকে ভূপাতিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আঙ্কারায় বিদ্রোহীদের একটি বিমান সরকারের অনুগতরা ভুপাতিত করেছে।
উপ-প্রধানমন্ত্রী মেহমেদ সিমসেক বার্তা সংস্থা সিএনএনের কাছে দাবি করে বলেন, ‘সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
যদিও ইস্তাম্বুলে এখনো গুলি ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানী আঙ্কারা কাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
সেনাবাহিনীর প্রধানের কোনো খোঁজ মিলছে না। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি বিদ্রোহীদের জিম্মির শিকার হয়েছেন।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর ইস্তাম্বুল আতাতুর্ক বিমানবন্দরের কার্যক্রম এবং গণমাধ্যমগুলোর সম্প্রচার পুণরায় শুরু করা হয়েছে। এর আগে এগুলো সৈন্যরা বন্ধ করে দিয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে সকল পক্ষকে দেশের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সমর্থন এবং রক্তপাত এড়ানোর আহ্বান জানান।
আঙ্কারায় সরকার সমর্থকরা রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম টিআরটির নিয়ন্ত্রণ অভ্যুত্থানকারীদের হাত থেকে দখল করে নেয়।
প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সমর্থকরা ইস্তাম্বুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে অবস্থান নিয়েছে।
বিভিন্ন মসজিদ থেকে ফজরের নামাজের কয়েক ঘণ্টা আগেই আজান দেওয়া হয় এবং মানুষকে গণতন্ত্র রক্ষায় রাস্তায় নামার আহ্বান জানানো হয়।
এর আগে একটি টেলিভিশন ঘোষণায় তুরস্কের সেনাবাহিনীর একটি অংশ দাবি করে, তারা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, এখন থেকে একটি ‘পিস কাউন্সিল’ দেশ পরিচালনা করবে। দেশে কারফিউ এবং মার্শাল ‘ল’ জারি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা এখনো স্পষ্ট হয়নি।
এ ঘটনাকে সেনাবাহিনীর ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।