জুমুআ (শুক্রবার), ১৯ এপ্রিল ২০২৪

উগ্রবাদী উস্কানির অভিযোগে আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের চাঁদপুরের কর্মসূচি বন্ধ ঘোষনা

ইউসুফের চাঁদপুরের কর্মসূচি বন্ধ ঘোষনা

চাঁদপুর প্রতিনিধি : বাংলাদেশে নব্য ফিতনা সৃষ্টিকারী আহলে হাদিসের অনুসারী বিতর্কিত বক্তা আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের কর্মসূচি কুমিল্লার পর এবার চাঁদপুরেও বন্ধ করে দেয়া হলো। তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা রিপোর্ট নেগেটিভ থাকায় চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান তার চাঁদপুরের কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার জঙ্গিবাদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে এই আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের চাঁদপুর সদর উপজেলাস্থ বিটি রোড মধ্য তরপুরচণ্ডী এলাকায় কর্মসূচি ছিলো। এখানে আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠিত ইত্তেবায়ে সুন্নাহ মসজিদ ও মাদ্রাসার উদ্যোগে আহলে হাদিসপন্থীদের একটি ইসলামী সম্মেলনের কর্মসূচি ছিলো গতকাল। এখানেই আবদুর রাজ্জাক প্রধান বক্তা ছিল।

এদিকে এই আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের ইসলাম বিদ্বেষী ও রাষ্ট্রবিরোধী বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে তাকে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিষিদ্ধ করা হয়। যেমন তার আলোচনার ভিডিও রেকর্ডে পাওয়া যায়, সে কবি নজরুল ইসলামের ‘মোহাম্মদ নাম যতই জপি, ততই মধুর লাগে’ ইসলামী গজলটিকে ব্যঙ্গ করে বলে ‘মোহাম্মদ নাম জপলে কোনো ফায়দা নেই। এটা শিরক’ (নাউজুবিল্লাহ)। এভাবে আরো বহু ইসলামবিরোধী বক্তব্য রয়েছে তার আলোচনায়। এছাড়া সে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে শিরক, জন্মদিবস, মৃত্যুদিবস পালন শিরক, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস শিরক ইত্যাদি নানা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানকে শিরক বলে দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিয়ে আসছে। তার এসব বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত কদিন আগে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন এই আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ ও তারিক মোনাওয়ারসহ তিনজন বিতর্কিত বক্তাকে নিষিদ্ধ করে। সে ধারাবাহিকতায় চাঁদপুরেও এই বিতর্কিত বক্তার অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম মাওলানা নেয়ামত উল্যা বলেন, বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে পীর আউলিয়াদের দেখানো পথে মুসল্লিগণ চলে আসছে। হঠাৎ করে আমাদের তরপুরচণ্ডীতে নতুন নিয়মে ধর্মীয় বিধি-বিধান চালু করায় সাধারণ মুসল্লিদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মুসল্লিরা আমাদেরকে বলেন, আপনারা মসজিদে আযান দেন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্ধারিত সময় অনুয়ায়ী। কিন্তু এই ইত্তেবায়ে সুন্নাহ্ মসজিদে আযান দেয়া হয় প্রতি ওয়াক্তের সময়ের অনেক পূর্বে। এতে করে গভীর রাতে আযান শুনে অনেক মুসল্লি ফজরের আযান মনে করে বিভ্রান্ত হন। এছাড়া আরো কিছু বিষয় নিয়ে এলাকার মানুষজনের সাথে তাদের ধর্মীয় গোড়ামি নিয়ে বাক-বিত-া হয়। এসব বিষয়ে এর আগেও একাধিকবার এলাকায় ঝামেলা হলে পুলিশ প্রশাসন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। সম্পূর্ণ বিতর্কিত ও ভ্রান্ত আকিদায় বিশ্বাসী দু’ একজনের অর্থায়নে এ মসজিদটি এখানে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এ এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।

সেনের দিঘির পাড় এলাকার আব্দুছ সোবাহান ও আলমগীর বলেন, ওরা ধর্মীয় কোনো বিষয়ে আলেমদের সাথে পরামর্শ না করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোরদের গোড়ামি শেখায়, এতে এলাকায় ফেতনা ছড়াচ্ছে। ওই সকল তরুণ-কিশোররা স্থানীয়দের সাথে ধর্মীয় কোনো বিষয়ে মতভেদ দেখা দিলে তারা জঙ্গিদের মতো আচরণ করে। এছাড়া এলাকায় ৩২টি মসজিদের মধ্যে ৩১টি মসজিদে এক নিয়মে আজান-নামাজসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। আর ওই ইত্তেবায়ে সুন্নাহ মসজিদে হয় ভিন্ন নিয়মে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে তাদের তুমুল বিরোধ রয়েছে।

এদিকে তরপুরচণ্ডী এলাকার সাধারণ মুসল্লিও প্রতিবাদী হয়ে ওঠে আহলে হাদিসদের এই বিতর্কিত ইসলামী সম্মেলনের বিরুদ্ধে। তাছাড়া পুলিশ প্রশাসনের কাছেও এই আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা রিপোর্ট নেগেটিভ থাকায় প্রশাসন তার মাহফিলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তারপরও স্থানীয় উত্তেজিত মুসল্লিরা প্রতিবাদী হয়ে উঠে। যে কারণে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেনো না ঘটে সেজন্যে পুলিশ সুপার জনাব মাহবুবুর রহমানের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল জাহেদ পারভেজ চৌধুরীর নেতৃত্বে জুমার নামাজের পূর্বে পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে পেঁৗছে। তখন এলাকাবাসীর দাবির মুখে প্রশাসন তাদের এই বিতর্কিত মাহফিল বন্ধ করে দেয়।

এদিকে এই ইসলামী সম্মেলনে যোগ দিতে এবং আহলে হাদিসের অনুসারী বক্তা আসছে, এ কারণে আহলে হাদিসের অনুসারী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এনে জড়ো করা হয় সম্মেলনস্থলে। বহিরাগত যারা এসেছে তাদের দেখে অনেকটা জঙ্গি স্টাইলের মনে হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায় এবং জুমার নামাজের আগে যখন উভয় পক্ষ অনেকটা মুখোমুখি হয়, তখন বহিরাগত আহলে হাদিসের অনুসারীরা বেশ মারমুখী ছিলো বলে স্থানীয় মুসল্লিরা অভিযোগ করেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ চৌধুরীর তাৎক্ষণিক উদ্যোগে দুই গ্রুপের মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এলাকাবাসীর বক্তব্য হচ্ছে, বিগত কয়েক বছর দেশে যেসব জঙ্গি ধরা পড়েছে এরা আহলে হাদিসের অনুসারী। তাই এরাই হচ্ছে জঙ্গি।

এলাকার মসজিদের ঈমাম বলেন, এদিকে আহলে হাদিস তথা সালাফী সমপ্রদায়ের সাথে জামায়াতে ইসলামীর অনেকটা আদর্শিক মিল রয়েছে। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর আকিদা এবং বিশ্বাসের সাথে এদের আকিদার অনেকটা মিল রয়েছে। তাই , বর্তমান প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং স্বাধীনতাবিরোধী সিল পড়ে যাওয়ার কারণে জামায়াত রূপ পরিবর্তন করে আহলে হাদিস বা সালাফী নাম দিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।

Facebook Comments Box