সাবত (শনিবার), ২০ এপ্রিল ২০২৪

নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনে অস্বাভাবিক ব্যয়

বিদ্যুতের দাম বাড়ায় ‘হোঁচট খাবে রপ্তানি’

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া বা হাতিয়ার মতো দ্বীপগুলোর স্থানীয় চাহিদা মেটাতে ছোট ছোট ডিজেল জেনারেটরচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। তবে এত দিনেও দেশের মূল গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়নি এসব দ্বীপের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। একই অবস্থা উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের। এতে কেন্দ্রগুলোতে নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যদিও এসব কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি।

তথ্যমতে, সন্দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় চার লাখ। তাদের চাহিদা মেটাতে তিন মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ডিজেল জেনারেটচালিত সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র গত অর্থবছর মাত্র তিন শতাংশ সময় (প্লান্ট ফ্যাক্টর) চালু ছিল। এতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় মাত্র সাত লাখ ৮৫ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় পড়ে ৩৫ টাকা ১৯ পয়সা।

একই ধরনের অবস্থা কুতুবদিয়া ও হাতিয়া ডিজেল জেনারেটর কেন্দ্র দুটির। দুই মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র দুটি গত অর্থবছর চালু ছিল যথাক্রমে চার ও ২০ শতাংশ। কেন্দ্র দুটিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় যথাক্রমে চার লাখ ৮২ হাজার ও ৩৮ লাখ ৭২ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে কুতুবদিয়া ও হাতিয়া কেন্দ্র দুটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি যথাক্রমে ৫২ টাকা ৯২ পয়সা ও ২৩ টাকা ৭১ পয়সা।

দ্বীপের এ তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই শুধু নয়, পিডিবির ডিজেলচালিত অন্যান্য কেন্দ্রেও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ছে ৩০ টাকার বেশি। যদিও এসব বিদ্যুৎ গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ছয় থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। আর বিতরণকারী কোম্পানিকে বাল্ক (পাইকারি) রেটে চার টাকা ৮৪ পয়সা দরে বিক্রি করে পিডিবি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় জনগণের চাহিদা মেটাতে দ্বীপ বা উত্তরাঞ্চলের ডিজেল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না। ওইসব এলাকায় দিনে বিদ্যুতের কোনো চাহিদা থাকে না। গভীর রাতেও বিদ্যুতের তেমন কোনো ব্যবহার নেই। শুধু সন্ধ্যায় তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এসব এলাকার অধিবাসী। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয় অনেক কম। ফলে ব্যয় পড়ে বেশি।

এদিকে অদক্ষ জেনারেটর, পুরোনো যন্ত্রপাতি ও গ্যাসস্বল্পতার কারণেও ডিজেলে এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম বরিশাল গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় কয়েক বছর ধরেই ডিজেলে চালানো হচ্ছে ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটি। এ কেন্দ্রে গত অর্থবছর ৯০ লাখ ১৪ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এতে ইউনিটপ্রতি ব্যয় পড়ে ৫৭ টাকা ২২ পয়সা। এর মধ্যে শুধু ডিজেলের মূল্য বাবদ জ্বালানি ব্যয়ই ছিল ৩৭ টাকা ৮৩ পয়সা। কেন্দ্রটির প্লান্ট ফ্যাক্টর মাত্র তিন শতাংশ।

একই অবস্থা সৈয়দপুর গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎকেন্দ্রের। ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গ্যাসের অভাবে চলছে ডিজেলে। এতে গত অর্থবছর উৎপাদিত হয় তিন কোটি ৬৭ লাখ ১৪ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এতে ইউনিটপ্রতি ব্যয় পড়ে ৩২ টাকা ৬৩ পয়সা, যার মধ্যে জ্বালানি ব্যয়ই ২৯ টাকা ৬৩ পয়সা। আর রংপুর গ্যাস টারবাইন কেন্দ্রটিতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ৩৭ টাকা ৫৮ পয়সা। এর মধ্যে জ্বালানি ব্যয় ছিল ৩৩ টাকা ৪২ পয়সা। ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটিতে দুই কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় গত অর্থবছর।

এদিকে ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ভেড়ামারা পাওয়ার স্টেশন কেন্দ্রটিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় এক কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা। এর মধ্যে জ্বালানি ব্যয় ছিল ২৮ টাকা ৩৫ পয়সা।

যদিও দ্বৈত জ্বালানিচালিত পিডিবির বড় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন ব্যয় পড়ছে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। গত অর্থবছর শিকলবাহার ১৫০ ও ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্র দুটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় যথাক্রমে ১৫ কোটি ৩১ লাখ ও ২৯ কোটি ৭৯ লাখ ইউনিট। এতে দুই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ব্যয় হয় ২৫ টাকা ৮২ পয়সা ও ১৪ টাকা ১৬ পয়সা। গত অর্থবছর এ বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির প্লান্ট ফ্যাক্টর ছিল যথাক্রমে ২৮ ও ৫১ শতাংশ। এর বাইরে নর্থওয়েস্ট জোন পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ডিজেলচালিত চার কেন্দ্রে গত অর্থবছর ব্যয় পড়ে যথাক্রমে ১৬ থেকে ২৬ টাকা।

Facebook Comments Box