সাবত (শনিবার), ২০ এপ্রিল ২০২৪

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ এখন ১১১ কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে ত্রুটি,

নিউজ ডেস্ক: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রের উপকারে আসার বদলে উল্টো বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর লোকসান দিতে দিতে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। এরপরও ক্রমাগত ব্যাংকঋণ নিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু ঋণ পরিশোধের নামটি নেই। এদের অপরিশোধিত ও খেলাপি ঋণ জমতে জমতে এখন পাহাড় সমান।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ ৩৯ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিঋণ হচ্ছে ১১১ কোটি টাকা। সরকারি মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে।

তথ্য অনুসারে, ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি পাওনা রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে। প্রতিষ্ঠানটির ঋণ এখন ১১ হাজার ৪২০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। এই প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা ছয় হাজার ৫২ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারি করপোরেশনগুলো ঋণ নিয়ে ঠিক জায়গায় ব্যবহার করেনি। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাও প্রতি বছর লোকসান দিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব, কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় ট্রেড ইউনিয়নের অযাচিত হস্তক্ষেপ, প্রয়োজনের তুলনায় অধিক জনবল নিয়োগ, অদক্ষতা, মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে ব্যর্থতা ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়সহ বেশ কিছু কারণে ব্যাংকের টাকা শোধ দিতে পারছে না। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রষ্ঠিানগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি কমানো গেলে সমস্যার সমাধান হবে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন না থাকায় নিজেরাও লোকসান থেকে বের হতে পারছে না, ব্যাংকগুলোর টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। ফলে তারা ব্যাংকগুলোকেও বিপদে ফেলে দিয়েছে।

তথ্য অনুসারে, গত এক বছরে চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের কাছে ব্যাংকের পাওনা বেড়েছে এক হাজার কোটি টাকা। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংকঋণ ছিল পাঁচ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এখন ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫২ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে এই ঋণ নেওয়া হয়, যা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই ঋণের বড় অংশই নেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে চার হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে পাঁচ হাজার ১২৯ কোটি টাকা, বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (বিওজিএমসি) কাছে দুই হাজার ৯৬ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) কাছে দুই হাজার ৮২৯ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কাছে এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ব্যাংকগুলোর। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কাছে তিন হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিডব্লিউডিবি) কাছে ৫৭২ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের কাছে ৪৮৫ কোটি টাকা এবং ঢাকা ওয়াসার কাছে ২৪৬ কোটি টাকা পাবে ব্যাংকগুলো।

 

Facebook Comments Box