খামিছ (বৃহস্পতিবার), ১৮ এপ্রিল ২০২৪

পবিত্র আশুরার ফযীলত ও আমলসমূহ

পবিত্র আশুরার ফযীলত ও আমলসমূহ

আরবি ১২ টি মাসের মধ্যে প্রথম মাস হচ্ছে মুহররমুল হারাম শরীফ। এই পবিত্র মাসের ১০ তারিখ কে পবিত্র আশুরা মিনাল মুহররম বলা হয়। ১৪৪১ হিজরী বছরের জন্য আগামী ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার হচ্ছে পবিত্র আশুরা মিনাল মুহররম।

“যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরার দিন তার পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়াবে-পরাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা বছর তাকে স্বচ্ছলতা দান করবেন।”(তিবরানী শরীফ, শুয়াবুল ঈমান, মা-ছাবাতা-বিস্সুন্নাহ্)

পবিত্র আশুরার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা মুহররম মাসকে এবং এর মধ্যস্থিত আশূরার দিনকে সম্মান কর। যে ব্যক্তি মুহররম মাস তথা আশূরার দিনকে সম্মান করবে, আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাত দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।”

পবিত্র আশুরা অর্থাৎ ১০ই মুহররম দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এই দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনেই। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা এ দিনেই সংঘটিত হয়। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোনো না কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা এদিনে সংঘটিত হয়েছে। সঙ্গতকারণেই এ দিনটি সবার জন্য এক মহান আনুষ্ঠানিকতার দিন, রহমত, বরকত, ছাকীনা, মাগফিরাত হাছিল করার দিন।

পবিত্র আশুরার আমলসমূহ

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ২টি রোযা রাখা সুন্নত: ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ।
রোযার ফযীলত সম্পর্কে হাদিস শরীফে বলা হয়েছে – “পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার ফরয রোযার পর উত্তম রোযা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার মাস পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার রোযা।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, রিয়াদুছ ছলিহীন)

পবিত্র আশূরার দিনে রোযাদারকে ইফতার করানো: “পবিত্র আশূরার দিন যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে যেন সমস্ত উম্মতকে ইফতার করালো।” সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র আশূরার দিনে পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো: “যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরার দিন তার পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়াবে-পরাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা বছর তাকে স্বচ্ছলতা দান করবেন।”(তিবরানী শরীফ, শুয়াবুল ঈমান, মা-ছাবাতা-বিস্সুন্নাহ্)

পবিত্র আশূরার দিনে গোসল করা: “যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন গোসল করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন। মৃত্যু ব্যতীত তার কোন কঠিন রোগ হবেনা এবং সে অলসতা ও দুঃখ-কষ্ট হতে নিরাপদ থাকবে।”

পবিত্র আশূরার দিনে চোখে সুরমা লাগানো: “যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন মেশ্ক মিশ্রিত সুরমা চোখে দিবে সেদিন হতে পরবর্তী এক বছর তার চোখে কোন প্রকার রোগ হবে না।” (মাকাসিদে হাসানা, শুয়াবুল ঈমান, দায়লামী, মাছাবাতা বিস্সুন্নাহ্)

পবিত্র আশূরার দিনে ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো এবং ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ানো ও পিপাসার্তদেরকে পানি পান করানো: পবিত্র আশূরার দিনে কোন মুসলমান যদি কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত দেয় এবং কোন ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ায় এবং কোন পিপাসার্তকে পানি পান করায় তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাতের দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়াবেন এবং ‘সালসাবীল’ ঝর্ণা থেকে পানীয় (শরবত) পান করাবেন।”

সুতরাং পবিত্র আশুরার গুরুত্ব তাৎপর্য এবং ফযীলত অনেক। সমস্ত মুসলমানদের উচিত এই দিনটিকে বিশেষ মর্যাদার সাথে পালন করা এবং পবিত্র মিলাদ-কিয়াম শরীফের মধ্যে দিয়ে বিশেষ দোয়া-মুনাজাত করা।

এবং সরকারের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে এই দিনে গরিব ইয়াতিম জনগণের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা। পবিত্র আশুরার গুরুত্ব সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা।

আয় আল্লাহ পাক! সারাবিশ্বের সকল মুসলমানকে এই পবিত্র মুহররম মাস ও আশুরা শরীফ-এর ফাযায়িল-ফযীলত বুঝে এর হাক্বীক্বী হক্ব আদায় করার তৌফিক দান করুন।

Facebook Comments Box