আহাদ (রবিবার), ২৮ এপ্রিল ২০২৪

কাশ্মীরে মুসলমানদের অবস্থা ফিলিস্তিনিদের মতই হবে

কাশ্মিরকে ফিলিস্তিন বানানোর পায়তারা করছে হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার।

পৃথিবীতে ভূস্বর্গ বলে পরিচিত ছিল কাশ্মীর । কারণ ৩৭০ অনুচ্ছেদের অধীনে থাকা ৩৫-এ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিশেষ অধিকার দেয়া ছিল তাদের। অর্থাৎ কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসিত একটি রাজ্য ছিল। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর এর অন্তর্গত ৩৫-এ অনুচ্ছেদে বর্ণিত কাশ্মিরিদের বিশেষ সুবিধাও বাতিল করে দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে মুসলমানদের ভূস্বর্গ নাম পরিচিত কাশ্মীরে প্রবেশ করার সুযোগ পেলো হিন্দুত্ববাদী পন্ডিতরা। মূলত হিন্দুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতেই হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের প্রশ্নে ইসরায়েলি নীতির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। সুতরাং কাশ্মিরকে ফিলিস্তিন বানানোর পায়তারা করছে হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার।

রুশ বংশোদ্ভূত মার্কিন বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু কারিবকো বলছেন, যেমন করে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূমিতে অর্ধলক্ষ সেনা-সমাবেশ ঘটিয়েছে, সেখান কারফিউ জারির পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ধারাবাহিকভাবে গ্রেফতার করার পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়েছে, গাজাকে পশ্চিমতীর থেকে পৃথক করে আলাদা প্রশাসনিক অঞ্চল বানিয়েছে, কাশ্মিরের ক্ষেত্রেও ভারত তাই করতে চলেছে। তার মতে, পশ্চিমতীরে যেমন করে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তেমনি করে কাশ্মিরেও হিন্দুত্ববাদীদের বসতি স্থাপনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

কাশ্মীরি মুসলমানদের যে ক্ষতি হলো:
কাশ্মিরের বাসিন্দা নন এমন ভারতীয় জমি কিনতে পারবে এবং চাকরি করতে পারবে। চাইলে টাটা বা বিড়লা শিল্পগোষ্ঠী জমি কিনে সেখানে কারখানাও গড়তে পারবে। পূর্বে সব ধরনের সরকারি চাকরি বা ট্রেড লাইসেন্সও বরাদ্দ ছিল শুধুমাত্র রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য।
অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন বৃদ্ধি পাবে।

কাশ্মীর ফিলিস্তিন হতে যাচ্ছে এই বিষয়ে যারা একমত পোষণ করেছেন
১) ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির এমপি টিকে রঙ্গরাজন বলেছেন, ‘আজকের দিনটি কালো দিবস। বিজেপি ভারতের সংবিধানকে ধর্ষণ করেছে। আপনারা জম্মু-কাশ্মির-লাদাখের মানুষের সাথে এ নিয়ে পরামর্শ করেননি। আইনসভা (জম্মু কাশ্মিরের) বিলোপ করেছেন। কোনো নির্বাচন আয়োজন করেননি। ওখানে নতুন করে ৩৫ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছেন। আপনারা আরেকটি ফিলিস্তিন বানাচ্ছেন।’

২) জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যাপিমন জ্যাকব সিএনএনকে বলেছেন , ‘যেভাবে প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রির মধ্য দিয়ে ৩৭০ ধারার বিলোপ করা হয়েছে, তার আইনত ভিত্তি দুর্বল। তিনি বলেন, ‘আদালতে এই আদেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, তবে আমার মনে হয় না বিজেপি সেটা নিয়ে চিন্তিত। যেনতেনভাবে তারা এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখবে এবং এই বাস্তবতা দীর্ঘ হবে। এই দীর্ঘ সময়কে কাজে লাগিয়ে বিজেপি রাজ্যটাকে ব্যাপকভাবে বদলে ফেলার চেষ্টা করবে। এখন আইনত সেখানে কোনও বিরোধী নেই। কেবলমাত্র গভর্নর আছেন যিনি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতার এখতিয়ার রাখেন। তবে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োজিত।’

৩) লন্ডন-ভিত্তিক জাস্টিস ফাউন্ডেশনের কর্ণধার অধ্যাপক শল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “৩৭০ ধারা বিলোপের আগেই অন্তত দুটি পদক্ষেপ থেকেই পরিষ্কার আঁচ করা যাচ্ছিল বিজেপি সরকার কাশ্মীরের আবহমান কালের চরিত্রটা পাল্টে দিতে চাইছে। প্রথমত ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল কাশ্মিরের জন্য যে ‘ডোভাল ডকট্রিন’ প্রণয়ন করেছিলেন তার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাই ছিল ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে লোকজনকে কাশ্মিরে স্থানান্তর। সেই ডকট্রিনে কাশ্মিরে হিন্দু পন্ডিতদের জন্য আলাদা কলোনি স্থাপন, শিল্পাঞ্চলের জন্য বাকি ভারত থেকে শিল্পশ্রমিকদের এনে বসতি স্থাপন কিংবা ভারতীয় সেনার সাবেক সদস্যদের এনে জমি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল।”

৪) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, কাশ্মিরিদের একটা বড় অংশ মনে করছে, হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মিরের বিদ্যমান জনমিতির সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলবে।

৫) লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস-এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিশেষ অধিকার বাতিল হলে তুষারে আচ্ছাদিত এই পার্বত্য ভূস্বর্গে হিন্দু সেটেলারদের বসতি গড়ার পথ প্রশস্ত হবে, হ্রাস পাবে মুসলিম জনসংখ্যা। একে সমালোচকরা ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইহুদি বসতি স্থাপনের অন্যায্যতার সঙ্গে তুলনা করছেন।

৬) রুশ বংশোদ্ভূত মার্কিন বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু কারিবকো বলছেন, যেমন করে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূমিতে অর্ধলক্ষ সেনা-সমাবেশ ঘটিয়েছে, সেখান কারফিউ জারির পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ধারাবাহিকভাবে গ্রেফতার করার পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়েছে, গাজাকে পশ্চিমতীর থেকে পৃথক করে আলাদা প্রশাসনিক অঞ্চল বানিয়েছে, কাশ্মিরের ক্ষেত্রেও ভারত তাই করতে চলেছে। তার মতে, পশ্চিমতীরে যেমন করে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তেমনি করে কাশ্মিরেও হিন্দুত্ববাদীদের বসতি স্থাপনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য গত সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একইদিনে কাশ্মিরকে সরাসরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে রাজ্যসভায় একটি বিলও পাস করা হয়। এর মধ্যে দিয়ে কাশ্মীর মুসলমানদের অবস্থা ফিলিস্তিনিদের মত যে হবে তা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

Facebook Comments Box