ছুলাছা (মঙ্গলবার), ১৯ মার্চ ২০২৪

রাজারবাগ দরবার শরীফের বিরুদ্ধে এনটিভি’ প্রচারিত প্রতিবেদন মিথ্যা, বানোয়াট, জালিয়াতিপূর্ণ

রাজারবাগ দরবার শরীফের বিরুদ্ধে এনটিভি’ প্রচারিত প্রতিবেদন মিথ্যা, বানোয়াট
ষ্টাফ রিপোর্টার : ইমামে আ’যম ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, গাউসুল আ’যম, হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি, ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনাদের মতো মহান বুযুর্গ ওলীআল্লাহ রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেব ক্বিবলা যিনি খ্বলীফাতুল্লাহ, খ্বলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমামুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে প্রচারিত চরম মানহানীকর মিথ্যা, বানোয়াট, জালিয়াতিপূর্ণ একতরফা প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন রাজারবাগ দরবার শরীফ। প্রতিবেদনে কোন রকমের প্রমাণ ছাড়া এবং রাজারবাগ শরীফের দায়িত্বশীল কারো সাথে যোগাযোগ না করে, কোন বক্তব্য না জেনে, রাজারবাগ দরবার শরীফের বিরুদ্ধে জঘণ্য মিথ্যাচার, তথা রাজারবাগের পীর সাহেব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নামে তথ্য সন্ত্রাস চালিয়েছে উক্ত টিভি চ্যানেল। যা প্রচলিত আইনে দন্ডনীয় অপরাধ।
আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনাকে জড়িয়ে এনটিভি’র চরম মিথ্যা, বানোয়াট প্রতিবেদন প্রচারের প্রতিবাদে” আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, এনটিভির গোটা প্রতিবেদনটিই রাজারবাগ শরীফের প্রতি একতরফা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তৈরী। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রাজারবাগ শরীফে যে, হাজার হাজার অনবদ্য ইসলামী কাজ, তালীম-তালক্বীন হয়, এখানকার তালীম পেয়ে মানুষ খারাপ কাজ ছেড়ে দেয় পাশাপাশি রাজারবাগ দরবার শরীফের তালীম পেয়ে মানুষ সন্ত্রাসবাদ মৌলবাদ, ধর্মব্যবসা ইত্যাদি ছেড়ে দিয়ে স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের আর্থসামাজিক নৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে সেসব বিষয়গুলোকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এনটিভি’র শফিক শাহীন জঘন্য মিথ্যাচার করেছে।
বক্তারা বলেন, এনটিভি’র মিথ্যা জালিয়াতিপূর্ণ গোটা প্রতিবেদনের কতিপয় প্রমাণ আমরা এখানে তুলে ধরছি। রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ছবি হিসেবে এনটিভি যে ফটোগ্রাফটি দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভুয়া। ভিন্ন কোনো ব্যক্তির ফটোগ্রাফকে জালিয়াতিপূর্ণভাবে হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম উনার ছবি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। কথিত ফটোগ্রাফের সত্যতা প্রমাণে তারা এনটিভি’র প্রতি এক হাজার কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেন।
বক্তারা বলেন, আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর শিশু আহরার হত্যার খুনীদের রক্ষা করতে নেমেছে এনটিভি। সেজন্য নিহত শিশু আহরারের আপন বড় ভাই আহমদুল্লাহ মাসুমের সাক্ষাৎকার নেয়ার পরও হত্যা মামলার বিষয়টি প্রচার করেনি এনটিভি। বরং হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে খুনীদের বিষয়গুলো প্রচার করে এনটিভি। বিষয়টি শিশুটির দুলাভাই মুফিজুল ইসলাম সাহেবের একান্ত ব্যক্তিগত পারিবারিক বিষয়। সেই বিষয়ে রাজারবাগ দরবার শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকা স্বত্বেও কুটকৌশলে এবং উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে উক্ত বিষয়টিকে রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে জড়িয়ে প্রচার করেছে এনটিভি।
বক্তারা বলেন, এনটিভি’র উল্লেখিত প্রতিবেদনে রাজধানীর শান্তিবাগের ১০৭ নং বাড়ী সম্পর্কেও সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে। এনটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বাড়ীটি রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুরিদের নামে জোর করে লিখে নেন। অথচ প্রকৃত সত্য হলো যে, ওই বাড়ীটি মরহুম ডা. আনোয়ারুল্লাহ’র নামে ছিল এখনো তার নামেই আছে। উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বাড়ীর মালিকানার কাগজপত্রসহ তার বড় ছেলে উপস্থিত ছিলেন। ফতুল্লার জায়গাটি ডা. আনোয়ারুল্লাহ’র স্ত্রীর নামে ছিল। সেখান থেকে তিনি কিছু জমি মাদরাসায় দান করেছেন। ঐ দানকৃত অংশে কাঞ্চনের কোন মালিকানা নেই। কাঞ্চনের মালিকানাধীন অংশের জায়গা এখনো তার নামেই রয়েছে।
বক্তারা বলেন, একটি সম্পূর্ণ পারিবারিক বিষয়টিকে এনটিভি চক্রান্তমূলকভাবে পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সাথে জড়িয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে চরম মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে।
বক্তারা বলেন, এনটিভির সাংবাদিক সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে খাগড়াছড়ির জনৈক খলীল হাওলাদারের বক্তব্য প্রচার করে। যে বক্তব্যে খলীল দাবি করে যে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় মাদরাসা তার জমি দখল করেছে এবং তার ঘর উচ্ছেদ করেছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে যে, এই জমিটি মাদরাসার নামে স্থানীয় প্রতিনিধি মুহম্মদ আব্দুল হাফিজ খান। তিনি ১৯৮৭ সালে রশিদুল ইসলামের কাছ থেকে ২ একর এবং শহিদুল হোসেনের কাছ থেকে ৪ একর জমি মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফের পক্ষে স্থানীয় সভাপতি হিসেবে ক্রয় করেন। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের আদেশক্রমে ১৫/৫/৮৭ সালেই উক্ত জমির নামজারী করা হয়। স্থানীয় দলীল, জমাবন্দীর মধ্যে ক্রেতা এবং বিক্রেতা কোথাও খলীল হাওলাদার নামক কোন ব্যক্তির নাম নেই। সেই ব্যক্তি জমির মালিক বা কিছুই নয়।
তারপরও এনটিভি জনৈক খলীল হাওলাদার নামক ব্যক্তিকে কান্নার ভান ধরিয়ে উপস্থাপন করে মূলত পবিত্র রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মানহানী করার লক্ষ্যেই সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই মিথ্যা কাহিনী সাজিয়েছে।
বক্তারা বলেন, এনটিভি’র বানোয়াট মিথ্যা প্রতিবেদনে বি-বাড়ীয়ার জনৈক কমিন শাহ, সোহেল চৌধুরী ও রেহানা বেগমের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক জনৈক কামাল মিয়ার বিষয়টির অবতারণা করে। এ বিষয়টিও রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে জড়িত করে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছে এনটিভি। সেই মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানান জনৈক কামাল মিয়া। এনটিভি সেই প্রতিবাদটি প্রচারও করে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিভিন্ন লোকের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয়কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাজারবাগ দরবার শরীফের সাথে জড়ানোর অপচেষ্টা করেছে এনটিভি। যার সাথে রাজারবাগ দরবার শরীফের ন্যূনতম কোন সম্পর্ক নেই।
বক্তারা বলেন, জালিয়াতিপূর্ণ মিথ্যা প্রতিবেদনে রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুরিদদেরকে ‘লাদেন বাহিনী’ খ্যাত বলা হয়েছে। অথচ সারাদেশে রাজারবাগ শরীফের ভক্তরা আল বাইয়্যিনাতের লোক হিসেবে পরিচিত এবং খোদ আল বাইয়্যিনাতেই ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস, আল কায়েদা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল জিহাদের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে লিখা হয়েছে এবং হচ্ছে দৈনিক আল ইহসান এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাতে।
বক্তারা বলেন, এনটিভি তার প্রতারণাপূর্ণ প্রতিবেদনে দাবি করে, পবিত্র রাজারবাগ দরবার শরীফ পক্ষ থেকে নাকি নিরপরাধ মানুষকে মামলার জালে জড়িয়ে তাদের সহায়-সম্পদ হাতিয়ে নেয়। কিন্তু কি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে তা তার প্রমাণ কোথায়? এ রকম মিথ্যাচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ পবিত্র রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পৈতৃকভাবেই অনেক সম্পদশালী। তিনি উনার সমস্ত সম্পদ দাতব্য কাজ অর্থাৎ মসজিদ-মাদ্রাসা, ইয়াতিম ও দুস্থদের জন্য ব্যয় করছেন। তিনি নিজ দায়িত্বে উনার দরবার শরীফে প্রতিদিন হাজার হাজার অসহায়-দুস্থ ও ইয়াতিমকে ফ্রী থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন, যা ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার শরীফ এসে যে কেউ স্বচক্ষে দেখে যেতে পারেন। সেখানে এনটিভির প্রতারক সফিক শাহীনের প্রতারণাপূর্ণ প্রতিবেদনে ‘অসহায় মানুষদের সম্পদ’হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা সম্পূর্ণ অমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিথ্যা ও মানহানী করার উদ্দেশ্য ছাড়া কিছু নয়। নাঊযুবিল্লাহ!
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন, রাজারবাগ শরীফের মুখপাত্র, দৈনিক আল ইহসান এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সম্পাদক এবং মুসলিম রাইটস ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারী জেনারেল আল্লামা মুহম্মদ মাহবুব আলম, মুসলিম রাইটস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সহঃ সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ আরিফুর রহমান, জজ কোর্টের আইনজীবি এ্যাডঃ মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এছাড়াও এনটিভি’র মিথ্যা প্রতিবেদনে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মুহম্মদ মুফিজুল ইসলাম, মুহম্মদ আক্তারী কামাল, মুহম্মদ হাফিজুর রহমান খান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, মুহম্মদ আবু বকর সিদ্দীক হাসান।
Facebook Comments Box