ছুলাছা (মঙ্গলবার), ১১ নভেম্বর ২০২৫

সুমহান ২২ জুমাদাল উখরা শরীফ পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব

২২ জুমাদাল উখরা শরীফ হযরত আবু সিদ্দীক রদ্বীয়াল্লাহু আনহুর বিছাল শরীফ

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুহব্বতই হচ্ছে ঈমান। ঐতিহাসিক ২২ জুমাদাল উখরা আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সুমহান ও পবিত্র বিছাল শরীফ-এর দিন এ উপলক্ষে সারাবিশ্বের মুসলিম উম্মতের পক্ষ থেকে পবিত্র মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও ওয়াজ শরীফ-এর মাহফিল করা সকলের জন্য ফরয-ওয়াজিব।

আর সরকারের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- উনার জীবনী মুবারক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা এবং সাথে সাথে উনার বিছাল শরীফ উপলক্ষে সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা।

হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী তিনিই ‘ছিদ্দীক্বে আকবর’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং এই ছিদ্দীক্বে আকবর লক্বব উনার একক বৈশিষ্ট্য। উনার মর্যাদা সল্প পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। এমন কোন ভাষা নেই, যে ভাষায় উনার জীবনীগ্রন্থ রচিত হয়নি। তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইসলামী জগতে এক নজিরবিহীন বিরল ব্যক্তিত্ব। নুবুওওয়াতের পর উনার ইমামত ও খিলাফত সকলেই বিনা দ্বিধায় মেনে নেন।

‘তিরমিযী শরীফ’-এর হাদীছ শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যেই জামায়াতে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনি উপস্থিত থাকবেন সেখানে তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইমামতি করা উচিত হবে না।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমি আমার রব (আল্লাহ পাক উনাকে) ছাড়া যদি আর কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম তাহলে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম।

২২শে জুমাদাল উখরা আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র বিছাল শরীফ। যিনি আল্লাহ পাক উনার যমীনে হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের পর মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দা এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। উনাকে মুহব্বত করা জুযে ঈমান। উনাকে অনুসরণ-অনুকরণ করলে হিদায়েত ও মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণ করবে তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আল্লাহ পাক স্বয়ং তিনি এবং তারাও আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।”

আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “আমার প্রত্যেক ছাহাবী তারকা সাদৃশ্য তাদের যে কাউকে যে কোন বিষয়ে যে কোন ব্যক্তি অনুসরণ করবে সে হিদায়েত পেয়ে যাবে।” সুবহানাল্লাহ!

মূলত উনার ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা ও বুযূর্গী সম্পর্কিত ইলম না থাকার কারণেই অনেকে উনাকে যথাযথ মুহব্বত ও অনুসরণ করতে পারছে না। যার ফলে তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিলে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই উনার সম্পর্কে জানা সকলের জন্যই ফরয। কেননা যে বিষয়টা আমল করা ফরয সে বিষয়ে ইলম অর্জন করাও ফরয। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে উনার সম্পর্কে কোন আলোচনাই নেই। তাহলে মুসলমানগণ কি করে হাক্বীক্বী মুসলমান হবে? তাই সরকারের জন্য দায়িত্ব কর্তব্য অর্থাৎ ফরয হচ্ছে- শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে অর্থাৎ পাঠ্যপুস্তকে উনার জীবনী মুবারক অন্তর্ভুক্ত করা। উনার বিছাল শরীফ উপলক্ষে সরকারিভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।

সরকারের জন্য আরো দায়িত্ব-কর্তব্য অর্থাৎ ফরয হচ্ছে- উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উপলক্ষে ছুটি ঘোষণা করা। কেননা পহেলা মে, বুদ্ধ পূর্ণিমা, দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য দিনে মুসলিম বিশ্বে ছুটি দেয়া হয়; যার সাথে মুসলিম ঐতিহ্যের কোন সম্পর্ক নেই এবং যা মুসলমানদের কোন প্রয়োজনও নেই। শুধু তাই নয়, বরং বিধর্মীদের বিশেষ দিনগুলি মুসলমানগণের জন্য পালন করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয ও হারাম এবং ঈমান নষ্ট হওয়ারও কারণ। প্রকৃতপক্ষে মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকেরই উচিত ছিল মুসলিম ঐতিহ্য ও ইসলামী ফযীলতযুক্ত দিন যেমন, উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিননাস সালাম, আহলে বাইত শরীফ, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বিলাদত ও বিছাল শরীফ সম্পর্কে অবগত থাকা।

মূলকথা হলো- আজ সুমহান ২২ জুমাদাল উখরা। আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সুমহান ও পবিত্র বিছাল শরীফ-এর দিন। এ উপলক্ষে সারাবিশ্বের মুসলিম উম্মতের পক্ষ থেকে পবিত্র মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও ওয়াজ শরীফ-এর মাহফিলের আয়োজন করে- উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক বেশি বেশি আলোচনা করা সকলের জন্য ফরয-ওয়াজিব। আর সরকারের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- উনার জীবনী মুবারক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা এবং সাথে সাথে উনার বিছাল শরীফ উপলক্ষে সরকারি ছুটির ঘোষণা করা।

Facebook Comments Box