জুমুআ (শুক্রবার), ১৮ অক্টোবর ২০২৪

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল থেকে এইচএসসির ১০০ খাতা উদ্ধার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল থেকে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সদ্য সমাপ্ত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) একশটি উত্তরপত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হলের এক নম্বর গণরুমের সামনে বারান্দায় একটি ব্যাগে পরিত্যক্ত অবস্থায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (কোড নম্বর  ২৬৮) বিষয়ের উত্তরপত্রগুলো পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুল হক আজাদ খান বলেন, উদ্ধারকৃত উত্তরপত্র রাজশাহী নিউ গর্ভমেন্ট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদকে মূল্যায়ন করতে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি উত্তরপত্রগুলো মূল্যায়ন না করে এমপি থ্রিডির জনৈক পরিচালক মাসুদকে মূল্যায়নের জন্য দেন। কিন্তু মাসুদ সেগুলো আবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে দেন। ওই ছাত্র পরবর্তীতে তার বান্ধবীকে দিয়ে খাতাগুলো মূল্যায়ন করতে দেন।’
প্রক্টর আরো বলেন, ‘প্রেমিকের নিকট থেকে ওই ছাত্রী খাতগুলো নিয়ে মন্নুজান হলেই মূল্যায়ন করছিলেন। তিনি ওই হলেই থাকেন। কিন্তু তিনি কে-তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ ওই কক্ষে ১০০ জন ছাত্রী থাকেন। তাদের মধ্যে কেউ একজন খাতাগুলো মূল্যায়ন করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।’ প্রক্টর বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ খবর পেয়ে বিকেল তিনটার দিকে ওই হলে তল্লাশি শুরু করে। এরপর খাতাগুলো উদ্ধার করা হয়।
মুন্নুজান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিন্নাত ফেরদৌসী বলেন, ‘গতকাল বিকেলে হল প্রশাসন জানাতে পারে হলের কোনো ছাত্রীর কাছে সদ্য সমাপ্ত এইচএসসির একশ খাতা রয়েছে। পরে প্রক্টরের নেতৃত্বে হলে তল্লাশি চালিয়ে হলের এক নম্বর গণরুমের সামনে থেকে দুই বান্ডিলে বাধা ২৬৮ নম্বর কোডের উত্তরপত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। পরে উত্তরপত্রগুলো রাজশাহী বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
অভিযোগ উঠেছে, একশ্রেণির শিক্ষক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষক হিসেবে খাতা উত্তোলন করলেও তারা নিজেরা খাতাগুলো মূল্যায়ন করেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ শিক্ষার্থী এবং কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করানো হয়। কোচিং সেন্টারের ওইসব শিক্ষক আবার শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভাগ্যের বিপর্যয় ঘটছে।
এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ থাকলেও শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ বরাবরই নির্বিকার বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, বিষয়টি শিক্ষাবোর্ডের নীতিনির্ধারক কর্মকর্তারা জানলেও ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক সম্পর্কের খাতিরে তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুন্নুজান হলে উত্তরপত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় উত্তরপত্র পড়ে থাকার সংবাদ পেয়ে টনক নড়ে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের।
খবর পেয়ে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তরুণ কুমার সরকার নিজেই ওই হলে গিয়ে উত্তরপত্রগুলো নিয়ে জান। এ ব্যাপারে মতামতের জন্য রাজশাহী বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তরুণ কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
Facebook Comments Box