খামিছ (বৃহস্পতিবার), ১৮ এপ্রিল ২০২৪

পরিশোধনে কনডেনসেট যাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে

পরিশোধনে কনডেনসেট যাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে

সিলেটের গ্যাস ফিল্ডসমূহ থেকে জ্বালানী তেলের উৎপাদন বন্ধ

নিউজ ডেস্ক: সিলেটের গ্যাস ফিল্ডসমূহের খনি থেকে উত্তোলিত কনডেনসেট থেকে জ্বালানী তেল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। তেলের মান ভালো নয় জানিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাস ফিল্ড গুলোতে উৎপাদিত পেট্রোল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ক্রয় না করায় এসব ফিল্ডের তেল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। বিপিসি তেল ক্রয় না করায় সিলেট গ্যাস ফিল্ডকে গ্যাসের সাথে উত্তোলিত কনডেনসেট এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আবার নিজস্ব প্ল্যান্টে পরিশোধন করে জ্বালানী তেল (পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন) বিক্রি করছে বিপিসি’র কাছে। এদিকে, তেল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্যাস ফিল্ডের কনডেনসেট থেকে পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন উৎপাদন প্লান্ট (ফ্রাকশনেশন প্লান্ট) গুলোতে কর্মরত বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার বসে আছেন। বন্ধ হয়ে গেছে গোলাপগঞ্জের আরপিজিসিএল ও এলপিজি প্লান্ট। এছাড়া, তেল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গোলাপগঞ্জ কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ড থেকে উত্তোলিত অতি উচ্চ মানের এনজিএল (ন্যাচারাল গ্যাস লিকুইড) পুড়িয়ে ধ্বংস করতে হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তবে, তেলের মান উন্নয়নে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য করে গড়ে না তুলে পুরো উৎপাদন কার্যক্রমকে বন্ধ করে বেসকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে জ্বালানীর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ছেড়ে দেয়ায় পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জ্বালানী তেলের ব্যবসা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান গোলাপগঞ্জের আরপিজিসিএল ও এলপিজি প্লান্ট বেসরকারি পরিচালনায় নিতেই এই অবস্থার সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না-এ নিয়েও শংকা স্থানীয় লোকজনের।

জ্বালানী সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট গ্যাস ফিল্ড গুলোতে গ্যাসের সাথে উপজাত হিসেবে কনডেনসেট উত্তোলিত হয়। এতে থেকে ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্টের মাধ্যমে পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিন উৎপাদন ও উৎপাদিত জ্বালানি বিপিসি’র নিকট বিক্রি করা হয়। বিপিসি’র অঙ্গ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কোম্পানীর মাধ্যমে জ্বালানী তেল গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে।

জানা গেছে, গ্যাস ফিল্ড গুলো আরওএন ৮৩ (৮৩ অকটেন নম্বর) নম্বরের পেট্রোল উৎপাদন করে। বিএসটিআই বাজারে মান নির্ধারণ করে ৮৯ অকটেন নম্বরের পেট্রোল। এই মান নির্ধারণ করার পরও পূর্বের আরওএন নম্বরের উৎপাদিত পেট্রোল ক্রয় করে বিপিসি। সম্প্রতি উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে রিট হলে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি দেশের সব ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্টের মতো সিলেট গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদিত তেল মানসম্মত নয় জানিয়ে গ্যাস ফিল্ড এর ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট থেকে তেল ক্রয় বন্ধ করে দেয় বিপিসি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন গ্যাস ফিল্ড থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার ব্যারেল (১৫ লক্ষ ৯০ হাজার লিটার) কনডেনসেট উত্তোলিত হয়। এর মধ্যে শুধু সিলেট বিভাগের গ্যাস ফিল্ড গুলোতে থেকে উত্তোলিত হয় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ব্যারেল এবং বাকি ৫শ’ ব্যারেল উৎপাদিত হয় দেশের অন্য গ্যাস ক্ষেত্র গুলোতে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডের আওতাধীন বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড থেকে ৭ হাজার ৭শ ৬১ ব্যারেল, সিলেটের জালালাবাদ গ্যাস ফিল্ড থেকে ১ হাজার ব্যারেল এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডের আওতাধীন হরিপুর এবং কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ড গোলাপগঞ্জ থেকে উৎপাদিত হয় ৭৩০ ব্যারেল কনডেনসেট।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডের আওতাধীন গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডে প্রতিদিন ৩শ’ ব্যারেল কনডেনসেট থেকে জ্বালানী তেল উৎপাদন ক্ষমতার ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট আছে। এছাড়া রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডে ৩ হাজার ৮শ’ ব্যারেলের ফ্রাকশনেশন প্লান্টসহ প্রতিটি গ্যাস ফিন্ডে ছোট আকারের ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট রয়েছে। অবশিষ্ট কনডেনসেট দেয়া হতো দেশের অন্যান্য স্থানের সরকারি ও বেসরকারি ফ্রাকশনেশন প্লান্টগুলোকে। ২ মাসেরও অধিক সময় থেকে বিপিসি তেল না নেয়ায় সিলেটসহ দেশের ১২টি ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্টের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে এবং সব কনডেনসেট দেয়া হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লি: এমডি প্রকৌশলী আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহ বলেন, অকটেন নম্বর উন্নয়নের জন্য সিআরইউ প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। এ থেকে আগামী মার্চে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

সিলেট গ্যাসফিল্ডের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে এসজিএফএল-এর অধীনে বর্তমানে ৫টি গ্যাস ফিল্ড রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-হরিপুর গ্যাস ফিল্ড, রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, ছাতক গ্যাস ফিল্ড, কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ড। এ পাচটি ফিল্ডের ৯টি কূপ থেকে বর্তমানে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। তবে, ছাতক গ্যাস ফিল্ড বর্তমানে পরিত্যক্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটর এজেন্ট এন্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, ২৭ বছর থেকে সিলেটের তেল দিয়ে গাড়ি চলেছে। এমনকি বিমানের জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত এখানকার উৎপাদিত জ্বালানী তেল। এখন হঠাৎ করে কেন পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে বুঝতে পারছি না। পেট্রোবাংলার সাথে কথা বললে তারা বলেন, আদালতের নির্দেশ- তাদের কিছু করার নেই। তিনি বলেন, উন্নত মানের তেল উৎপাদনের কথা বলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু, এখন প্রতিদিন গ্রাহকদের অভিযোগের পর অভিযোগ। এখন যে তেল দেয়া হচ্ছে-তা আমাদের গ্যাস ফিল্ড গুলোর উৎপাদিত তেল থেকে অনেক নিম্নমানের। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, রাষ্ট্র ও জনগণের চিন্তা বাদ দিয়ে ব্যক্তি স্বার্থেই কী তেল উৎপাদনের কাজ বেসরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হলো।

রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক গ্যাস ফিল্ড গুলোর তেল উৎপাদন কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান।

Facebook Comments Box