প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কার্যকর পরিবেশ তৈরিতে দেশটিকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের বারবার দেশ থেকে বিতারণ বন্ধ এবং মূল সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে অবশ্যই কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমাদের আরো আন্তর্জাতিক বিশেষ করে জি-৭ দেশগুলোর সমর্থন প্রয়োজন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সমস্যার মূল মিয়ানমারেই নিহিত এবং তাদেরকেই এর সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে যেখানে তারা শত শত বছর ধরে বসবাস করে আসছে।’ তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের অধিকার নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছি। এই প্রক্রিয়া যাতে স্থায়ী ও টেকসই হয় সে জন্য আমরা এতে ইউএনএইচসিআরকে অন্তর্ভুক্ত করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশসমূহ অতি দ্রুত এবং নিঃশর্ত বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে রাজি করানো এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ অবরোধ আরোপে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব গ্রহণে কাজ করার জন্য জি-৭ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যাযজ্ঞের অপরাধ অথবা তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি ও সুবিচার নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোট ১২২টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও এবং জাতিসংঘ সংস্থা কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ক্যাম্পগুলোতে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে তাদের নিরাপদ আশ্রয়, চিকিৎসাসেবা এবং অন্যান্য মৌলিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা আসন্ন বর্ষা ও সাইক্লোন মৌসুমের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতিবেশ সুরক্ষার জন্য জি-৭ দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারি উন্নয়নের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্র ও উপকূলীয় প্রতিবেশের টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো ও জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, “নীল জল আমাদের জনগণের কাছে একটি ‘ঐতিহ্য’। সময়ের দাবি অনুযায়ী আমরা আমাদের উপসাগরকে সংরক্ষণ এবং সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ৭৫টি উপকূলীয় দ্বীপ ডুবে যাওয়ার পর্যায়ে রয়েছে এবং নদীগুলোতে সাগরের লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় দুই কোটি মানুষের বাস্তুভিটা স্থানান্তরের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের জীবিকার সুযোগ সীমিত এবং মহাসাগরীয় চ্যালেঞ্জ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের খাপ খাইয়ে চলার ক্ষমতা খুবই সীমিত। তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বত্র শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জনগণের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে টেকসই উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে সামুদ্রিক নীতি গ্রহণ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী জি-৭ভুক্ত সব দেশকে সমুদ্রভিত্তিক পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সম্মান এবং সুবিধার অংশীদারির নীতির ভিত্তিতে এবং তাদের উদ্ভাবন ও সক্ষমতাকে সমুদ্র সম্পদের টেকসই উন্নয়নের সুরক্ষা প্রদান, সংরক্ষণ এবং কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
অভিযোজিত প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং মূল প্রযুক্তি হস্তান্তরকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ জন্য সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তির দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।’
রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশে বিরূপ প্রভাব পড়েছে : কানাডার বিশেষ দূত
আমাদের কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, মিয়ানমার থেকে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার কারণে বাংলাদেশে অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রীর মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত বব রে। আজ সোমবার টরন্টোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি ওই মন্তব্য করেন।
বব রে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এর কারণ হলো—রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশেই থাকবে। অপর কারণটি হলো বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার কারণে বাংলাদেশে অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গারা বড় বিপদে পড়েছে। আশ্রয় শিবিরগুলোর অবস্থাও করুণ। এমন প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের জন্য কানাডা আরো কী কী করতে পারে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি আজ আলোচনা করবেন।
কানাডিয়ান টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় কানাডা আগামী তিন বছরে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। সূত্র : বাসস।