খামিছ (বৃহস্পতিবার), ২৮ মার্চ ২০২৪

অবৈধ উপার্জনের ৮ ক্ষতি

অবৈধ উপার্জনের ৮ ক্ষতি

মাওলানা মাহমুদ তালুকদারঃ  হারাম উপার্জন মানুষের দুনিয়া আখিরাত ধ্বংস করে দেয়। এর পরও কিছু মানুষ এ কাজ করে থাকে। অনেকে চাকরি করার আগে সেখানে বৈধ বেতনের সঙ্গে অবৈধ কত টাকা উপার্জন করতে পারবে, সে হিসাব করে। অথচ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে মুমিনরা, আহার করো আমি তোমাদের যে হালাল রিজিক দিয়েছি তা থেকে এবং মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য শোকর করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য হালাল খাবার, হালাল উপার্জন ফরজ করেছেন। এখানে অবৈধ উপার্জনের ৮ ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করা হলো—

দোয়া কবুল হয় না

যারা হারাম পন্থায় উপার্জন করে, মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের দোয়া কবুল করেন না। হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও সারা শরীর ধূলিমলিন। সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে? (তিরমিজি, হাদিস : ২৯৮৯)

বরকত কমে যায়

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মহান আল্লাহ তায়ালা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন আর দান-সদকা বাড়িয়ে দেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৬)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, ‘যে সম্পদের সঙ্গে সুদ মিশ্রিত হয়ে যায়, বেশির ভাগ সময় সেগুলো ধ্বংস হয়, অধিকন্তু আগে যা ছিল, তাও সঙ্গে নিয়ে যায়। সুদ ও জুয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়, অজস্র পুঁজির মালিক কোটিপতি দেখতে দেখতে দেউলিয়া ও ফকিরে পরিণত হয়। এভাবে হারাম উপার্জন মানুষের রিজিক কমিয়ে দেয়।

অনিবার্য ধ্বংস

হারাম উপার্জন মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। মহান আল্লাহ তায়ালা হারাম উপার্জনকারীদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও—যদি তোমরা মুমিন হও। অতঃপর যদি তোমরা না করো, তাহলে মহান আল্লাহ পাক ও উনার রাসূল হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত ২৭৮-২৭৯)

মহান আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টি

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য খরিদ করে, আখিরাতে তাদের কোনো অংশ নেই। আর মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেন না কেয়ামতের দিন। আর তাদের পরিশুদ্ধও করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৭৭)

হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার অভিশাপ

যারা সুদভিত্তিক লেনদেনে লিপ্ত, হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। জাবের রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও তার সাক্ষীদ্বয়ের ওপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন এরা সবাই সমান অপরাধী। (মুসলিম, হাদিস : ৩৯৮৫)

অন্য হাদিসে রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঘুষদাতা ও গ্রহীতার ওপর মহান আল্লাহ তায়ালা উনার অভিশাপ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩১৩)

কবরের শাস্তি

হারাম উপার্জন মানুষকে যেভাবে দুনিয়াতে শাস্তি দেয়, তেমনি কবরেও তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। সামুরাহ ইবনে জুনদুব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নবী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি, দুই ব্যক্তি আমার কাছে আগমন করে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছলাম। নদীর মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানের লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায় তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথরখণ্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যক্তি কে? সে বলল, যাকে আপনি (রক্তের) নদীতে দেখেছেন, সে হলো সুদখোর। (বুখারি, হাদিস : ২০৮৫)

আখিরাতের শাস্তি

আখিরাতেও অবৈধ উপার্জনকারী কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। খাওলা আনসারিয়া রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কিছু লোক আল্লাহর দেওয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।’ (বুখারি, হাদিস : ৩১১৮)

দান-সদকা কবুল হয় না

অনেকে মনে করে, হারাম পথে উপার্জন করে সেখান থেকে কিছু সদকা করে দিলে হয়তো শাস্তি কিছুটা হালকা হবে। অথবা মহান আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু ব্যাপারটা এরকম নয়। রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা ছাড়া কোনো সালাত কবুল করেন না এবং অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের সদকা গ্রহণ করেন না।’ (নাসায়ি, হাদিস : ১৩৯)

অতএব আমাদের সবার উচিত, হারাম উপার্জন থেকে দূরে থাকা। কারণ এর দ্বারা সাময়িক সচ্ছলতা অর্জিত হলেও এর ক্ষতি চিরস্থায়ী। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হালাল উপার্জন করার তাওফিক দান করুন।

Facebook Comments Box