৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার
নিউজ ডেস্ক : দেশের খাদ্য মজুত বাড়ানোর নামে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।
এজন্য মোট ব্যয় হবে ১১২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এই গম সরবরাহ করবে। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
খাদ্য অধিদপ্তরের গত ২ মার্চের দৈনিক খাদ্য শস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে ১ মার্চ চালের মজুত ছিল ১৪ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন এবং গমের মজুত ছিল ৩ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত ১ মার্চ পর্যন্ত সরকারের হাতে মোট খাদ্য শস্য মজুতের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। দেশের খাদ্য মজুত বাড়াতেই আরো ৫০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য তৈরি সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের গম আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্যাকেজ-৩ এর আওতায় খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক গত ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক কোটেশন আহ্বান করা হয়। এজন্য দেশের চারটি সংবাদ মাধ্যমে কোটেশন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। এতে মোট ৮টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র সংগ্রহ করলেও ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মেসার্স, অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল প্রতি মেট্রিক টনের দাম উল্লেখ করে ২৬৫ দশমিক ৩৮ মার্কিন ডলার, সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক মেসার্স, অ্যাসটন এফএফআই (সুইস) প্রতি মেট্রিক টনের দাম ২৬৬ দশমিক ৬৪ মার্কিন ডলার, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মেসার্স, সুইস সিঙ্গাপুর ওভারসিস এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড ২৬৯ দশমিক ৪০ মার্কিন ডলার, অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক মেসার্স, জে. কে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড ২৬৯ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলার এবং দুবাই ভিত্তিক মেসার্স, ফনিক্স গ্লোবাল ডিএমসিসি প্রতি মেট্রিক টনের দাম ২৭৪ দশমিক ৩৫ মার্কিন ডলার দাম উল্লেখ করে।
খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত বাজার দর যাচাই কমিটি কোটেশনের সংশ্লিষ্ট প্রাক্তলিত দরের সিলকৃত প্রতিবেদন ‘দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি’র বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। এতে দেখা যায়, মুনাফাসহ বিভিন্ন খাতে সম্ভাব্য খরচ বিবেচনায় ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রোটিংযুক্ত (হার্ড রেড উইনটার) জাতের প্রতি মেট্রিক টন গমের প্রাক্কলিত মূল্য সিআইএফ-এলও রাশিয়া ২৮৩-২৮৮ ডলার, ইউক্রেন ২৮১-২৮৬ ডলার ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩১৭-৩২০ ডলার হতে পারে বলে রিপোর্ট দাখিল করে।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে কোটেশনে অংশগ্রহণকারী ৫টি প্রতিষ্ঠানকে গ্রহণযোগ্য দরদাতা ঘোষণা করে। এরপর কোটেশনকৃত ৫০ হাজার মেট্রিক টন গমের জন্য দাখিলকৃত দরপত্রসমূহের মধ্যে মেসার্স, অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনালের দর প্রতি মেট্রিক টন ২৬৫ দশমিক ৩৮ মার্কিন ডলার বাজার দর যাচাই কমিটি কর্তৃক বাজার দর যাচাই কমিটি কর্তৃক যাচাই প্রতিবেদনে উল্লেখিত বন্দর পর্যন্ত রাশিয়া, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র উৎসের প্রতি মেট্রিক টন গমের শুল্কপূর্বক মূল্য যথাক্রমে ২৮৩-২৮৮, ২৮১-২৮৬ ও ৩১৭-৩২০ মার্কিন ডলারের নিচে রয়েছে—এজন্য তা গ্রহণ করার সুপারিশ করে। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য সর্বনিম্ন দরদাতার দাখিলকৃত কোটেশনে রাশিয়া/কানাডা/রোমানিয়া/ইউক্রেন/আর্জেন্টেনিয়া/ইউএসএ উৎসের গম সংশ্লিষ্ট দেশের যেকোনো সমুদ্রবন্দর থেকে বোঝাই দেবে মর্মে দরপত্রে উল্রেখ রয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের গম আমদানি খাতে ৫ লাখ মেট্রিক টন গমের বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে এক হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর আগে ৬২৬ কোটি ১৭ লাখ ৫৫ হাজার ২২৭ টাকার গম আমদানি করার পর ৬২০ কোটি ৮২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা অবশিষ্ট রয়েছে। তা থেকে প্রস্তাবিত ৫০ হাজার মেট্রিক টন গমের দাম বাবদ ১১২ কোটি ৭২ লাখ ১ হাজার ৫৫০ টাকা পরিশোধ করার পর এখাতে অবশিষ্ট থাকবে ৫০৮ কোটি ১০ লাখ ৪৩ হাজার ২২৩ টাকা।
সূত্র জানায়, কোটেশনের মেয়াদ আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত উল্লেখ আছে বিধায় উক্ত সময়সীমার মধ্যে অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।