হঠাৎ করেই গ্রেপ্তার অভিযানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি। এক মাসে গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনের মধ্যে পাঁচজন বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংক জালিয়াতি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। অন্যদের মধ্যে ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও প্রকৌশলী রয়েছেন।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনে যেকোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কমিশনের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে দুদকের সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন এ বিষয়ে বিশেষ কোনো নির্দেশ দেয়নি। তদন্ত কর্মকর্তারা তাঁদের তদন্তের প্রয়োজনেই এসব গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত পর্যায়ে কর্মকর্তারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। সে ক্ষমতাবলে তদন্তের প্রয়োজনে তাঁরা যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেন।
আজ বুধবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গাইবান্ধায় অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে দুদক। তাঁদের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) এক প্রকৌশলী, সাবেক সিভিল সার্জন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের একজন উপসহকারী প্রকৌশলী ও একজন ঠিকাদার রয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে গাইবান্ধা থেকে। গাইবান্ধায় একটি বিদ্যালয়ের শৌচাগারের ছাদ ঢালাইয়ে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের ঘটনায় ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশের পর পুলিশের সহায়তায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ঠিকাদার আবদুল খালেক সরকার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আরিফ বিল্লাহ ডাকুয়া।
আজ সকালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পটিয়া উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলী জিয়াউল হক দুলালকে। প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো না করে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন। গত মার্চে তাঁর বিরুদ্ধে বাঘাইছড়ি থানায় মামলা হয়।
বরিশালের কোতোয়ালি থানায় গত ২১ মার্চ দুদকের করা একটি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি বরিশালের সাবেক সিভিল সার্জন আফতাব উদ্দিনকে তাঁর সেগুনবাগিচার বাসা থেকে আজ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী কিনে ৯১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের মতিঝিলের স্থানীয় শাখা থেকে অর্থ আত্মসাতের দুটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ব্যাংকটির এনসিটিবি শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসেন ও কুমিল্লার দেবীদ্বার শাখার ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন। সোনালী ব্যাংক থেকে ৬ কোটি ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪৯৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জাকির হোসেনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর একটি মামলা করেছিল দুদক। ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আরেকটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মোশারেফ হোসেন ও জাকির হোসেন।
গত ১১ মার্চ চেক জালিয়াতির একটি মামলায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একটি প্রকল্পের পরিচালক এ কে এম শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেন দুদকের উপপরিচালক এস এম রফিকুল ইসলাম।
একই দিন গ্রেপ্তার করা হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঢাকার কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু আশরাফ সিদ্দিকীকে। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করে দিয়ে ৩০ লাখ টাকার বেশি সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে করা পাঁচ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এই সরকারি কর্মকর্তা।
এর আগে গত ২৭ মার্চ রাতভর অভিযান চালিয়ে বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতির মামলায় তিনজন ব্যবসায়ী ও ব্যাংকটির একজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে দুদক। গ্রেপ্তার চার ব্যক্তি হলেন ব্যবসায়ী সৈয়দ হাসিবুল গণি, মো. আকবর হোসেন ও ফয়েজুন নবী চৌধুরী এবং বেসিক ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ইকরামুল বারী। একই ঘটনায় ৫ এপ্রিল ব্যাংকটির মহাব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে সংস্থাটি।
ঋণপত্র (এলসি) জালিয়াতির দুটি মামলায় মো. নুরুজ্জামান নামের সাবেক এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে গত ৩০ মার্চ গ্রেপ্তার করেন দুদকের উপপরিচালক মোজাহার আলী সরদার। গত বছরের ২১ মার্চ এ ঘটনায় মামলা হয়। নুরুজ্জামান সোনালী ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখার সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার ছিলেন।
একই দিন খুলনার দৌলতপুর থেকে পরিচালক জায়েদ হোসেন খানের নেতৃত্বে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ দল ব্যবসায়ী টিপু সুলতানকে গ্রেপ্তার করে। জনতা ব্যাংক থেকে এলসির মাধ্যমে প্রায় ২৫১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি টিপু সুলতান। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি টিপু সুলতানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কুমিল্লা শাখার পরিদর্শক (আইটি) আবু ছালেহ মাহমুদকে ১ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৬ টাকা জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় ৬ এপ্রিল বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তার করে দুদক। গত বছরের ২ জুলাই আবু ছালেহ মাহমুদের বিরুদ্ধে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয়।
গত ৫ মার্চ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে দুদকের উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে দুদকের একটি দল জিল্লুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। একটি ব্যাংক থেকে ১ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা চারজনের সঙ্গে যোগসাজশে আত্মসাৎ করার অভিযোগে করা একটি মামলার আসামি তিনি। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর মামলাটি করে দুদক। কিন্তু আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি দুদকের জানা না থাকায় গ্রেপ্তারের পরদিনই আদালতে হাজির করলে ওই ব্যবসায়ী আদালতের নির্দেশে মুক্তি পান।