সাদা ফুলে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন রাজবাড়ীর চাষিরা
রাজবাড়ী সংবাদদাতা: দূর থেকে দেখলে কোনও সাদা রঙের ফুলের বাগান মনে হয়। আসলে এটা পেঁয়াজ বীজের ক্ষেত। এর ফুল সাদা হলেও বীজ কালো। আর এই ফুলে লুকিয়ে রয়েছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। এ কারণে পেঁয়াজ বীজকে ‘কালো সোনা’ও বলা হয়। এবার আবাদ ভালো হওয়ায় লাভের আশা দেখছেন রাজবাড়ীর চাষিরা।
পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের তৃতীয় স্থানে রাজবাড়ী জেলা। গত বছর বাজার থেকে চড়া দামে বীজ কিনে পেঁয়াজ চাষের খরচ প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই আশানুরূপ লাভ না হওয়ায় কৃষকরা এবার নিজেদের উৎপাদিত বীজে পেঁয়াজ আবাদে আশার আলো দেখছেন। এমনকি দেশের প্রায় ১৪ শতাংশ পেঁয়াজ রাজবাড়ীতে উৎপাদন হয়। এছাড়া জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদনের পাশাপাশি বীজ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
রাজবাড়ীতে ‘কালো সোনা’ বলে খ্যাতি রয়েছে এই পেঁয়াজ বীজের। ‘কদম’ নামেও পরিচিত। তাহেরপুরি ও ফরিদপুরি জাতের বীজ আবাদ হয় এই জেলায়। রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলায় কম-বেশি বীজের আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদর, কালুখালী ও পাংশাতে বেশি বীজের আবাদ হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজবাড়ীতে ২শ’ হেক্টর পেঁয়াজ বীজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও, আবাদ হয়েছে মোট ১৯৫ হেক্টর। গত বছর ১৭৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ফলন হয়েছিল প্রায় ৫ থেকে ৬শ’ কেজি। এবারও তেমনটিই আশা করছে কৃষি অধিদফতর।
তবে পেঁয়াজ বীজের আবাদ বাড়লেও মৌমাছি ও অতিবৃষ্টির অভাবে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। তারপরও যেভাবে ফলন হয়েছে তা ভালোভাবে ঘরে তুলতে পারলে এবং বাজারজাত ভালোমতো করতে পারলে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার জেলায় বীজের আবাদ বেড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ৫শ’ কেজি ফলন হবে। ফলন ভালোর জন্য মৌমাছি তেমন ভূমিকা রাখে না। এলোমেলো ঝড়ো বাতাস, কুয়াশা ও বৃষ্টিতে ফলনের ক্ষতি হয়।
কালুখালী উপজেলার পেঁয়াজের বীজ চাষি ইকবাল হোসেন বলেন, প্রতি বছর পেঁয়াজের পাশাপাশি বীজের চাষও করি। প্রতি পাকি জমিতে (২২ শতাংশ) পেঁয়াজ বীজের চাষ করতে ৬ থেকে ৭ মণ বড় পেঁয়াজ লাগে। এর পর শ্রমিক খরচ আছে। সপ্তাহে দুই বার কীটনাশক সার দিতে হয়। তবে এ বছর মৌমাছি অতিবৃষ্টি না থাকায় ফুল শুকিয়ে কালো হয়ে যাচ্ছে। এতে ফলন কম হবে। বর্তমান মাঠের যে অবস্থা এরকম থাকলেও লোকসান হবে না।
পাংশা উপজেলার চাষি সালাম শিকদার জানান, বিগত দিনে যেসব জমিতে অন্যান্য ফসল আবাদ করতাম, এবার সেখানে পেঁয়াজের বীজ আবাদ করেছি। দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ আবাদ করেছি। প্রতি বিঘায় ৬০-৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত বছর এক কেজি পেঁয়াজের বীজ দুই হাজার টাকার ওপরে বিক্রি করেছি। আশা করছি, এবারও ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো।
পেঁয়াজ বীজের আবাদ বেড়েছে
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার পেঁয়াজ বীজের আবাদ বেড়েছে। এলোমেলো বাতাস, বৃষ্টিতে ও কুয়াশায় ফলনের ক্ষতি হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ৫শ’ কেজি ফলন হবে। ফলন ভালোর জন্য মৌমাছি তেমন কোনও ভূমিকা রাখে না বলে জানান তিনি।