সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতের বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার
নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যমূলক ও মুসলমানবিরোধী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ২০১৯-কে বৈধ করার জন্য অস্বাভাবিক আচরণ করছে ভারত। দেশটির কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী ব্যক্তি বাংলাদেশকে হিন্দুদের জন্য সহিংস রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
গত সপ্তাহে ভারতের রাজ্যসভায় পাস হয়েছে সিএএ। এই আইনের অধীনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদেরকে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। বিলে মুসলিমদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়নি, রোহিঙ্গাদের মতো নির্যাতিত গোষ্ঠির নামও নেই। জাতিসংঘ এই বিলটিকে ‘প্রকৃতিগতভাবেই বৈষম্যমূলক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
কিন্তু এই পয়েন্টটি ভারতের বিলের পক্ষের লোকেরা স্বীকার করছেনা। তারা বিলের বৈষম্যমূলক বৈশিষ্ট্য থেকে নজর অন্যদিকে সরাতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি সামনে নিয়ে আসছে। আর উদ্দেশ্যমূল ও সুনির্দিষ্টভাবে বললে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করছে তারা।
ইন্ডিয়া টুডের সাথে এক সাক্ষাতকারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বিলের স্বপক্ষে বলেছে যে, বাংলাদেশ একটি ইসলামিক রাষ্ট্র। এদিকে, ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বিলের সমর্থনে এমনভাবে কথা বলছে যেন এই বিলটি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সমর্থনে একটা ভালো উদ্যোগ।
এর আগে সে পার্লামেন্টে বলেছে, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে। ১৯৪৭ সালে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ছিল পুরো জনসংখ্যার ২২ শতাংশ, আর এখন সেটা ৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। যদিও তার এই বক্তব্যের কোনোই ভিত্তি নেই। তার বক্তব্যে সম্পূর্ণভাবে ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করা হয়েছে, এবং আদমশুমারির তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, ১৯৭১ সালের আগে বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানের অংশ ছিল, তখনই এর বড় একটা অংশের স্থানান্তর ঘটেছে। ইতোমধ্যে, অমুসলিমদের ভারত গমন বেড়ে যাওয়ার একটা কারণ ছিল পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বিহার ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে মুসলিমদের আগমণ ঘটে। ১৯৭৪ সালের আদমশুমারির হিসেবে দেখা যায় যে, ১৯৫১ সালে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ৩৪ মিলিয়ন এবং ১৯৬১ সালে সেটা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৬৫ মিলিয়ন হয়ে যায়। এ কারণে আনুপাতিক হারে তারতম্য ঘটে।
ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে মানুষের স্থানান্তরের ইতিহাস অত্যন্ত জটিল ও এই প্রক্রিয়াটি ঘটেছে প্রায় আধা শতাব্দি ধরে এবং বহু মিলিয়ন মানুষ এ সময়ে স্থানান্তরিত হয়েছে। ঘরবাড়ি, কাগজপত্রাদি এবং জীবন হারিয়েছে। জনসংখ্যার হাতবদলের সাথে সাথে মানচিত্র বদলেছে। কিছু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বিহেসিবী নাগরিকত্ব দিয়ে দিলেই শুধু বহু পুরাতন এই সমস্যার সমাধান হবে না। আইনি এই পদক্ষেপটি শুধু বৈষম্যমূলকই নয়, এটা খুবই সাদামাটা এবং ঐতিহাসিক প্রক্রিয়াকে এখানে অবজ্ঞা করা হয়েছে। আর এটাকে বৈধ করার জন্যেই অযৌক্তিকভাবে এবং কোন তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।