শুধু কথায় নয়, কাজে প্রমাণ চায় সরকার

আরএফএন ডেস্কঃ জামায়াতের সঙ্গ ছাড়লে বিএনপির সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী বা জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। সরকারি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ওই প্রস্তাব এখন আলোচনার সামনে চলে এসেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা জামায়াত প্রশ্নে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থানকে পর্যবেক্ষণ করছেন। কথায় নয়, বাস্তবে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ছিন্ন হওয়াটা তাঁরা দেখতে চান।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার পর পর দুটি আলোচনায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সামনেই জামায়াত প্রসঙ্গ আলোচনায় ওঠে। জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে বিএনপির জামায়াতের সঙ্গ ছাড়া উচিত বলে কেউ কেউ মত দেন। খালেদা জিয়া এ ধরনের বক্তব্য শুনেছেন এবং নিজেও অংশ নিয়েছেন।
গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যের বিষয়ে রাজনীতিতে আলোচনা জোরদার হয়। এত দিন বিএনপি রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে সংলাপের আহ্বান জানালেও সরকার তা নাকচ করে আসছিল। কিন্তু কয়েক মাস ধরে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি দলের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে ঐক্যের আলোচনা হতে পারে। তবে সেখানে বিএনপিকে রাজনৈতিক সততার পরিচয় দিতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা এ প্রসঙ্গে বলছেন, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়লে আওয়ামী লীগ যে জামায়াতকে কাছে টেনে নেবে না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী কোনো দলকে সঙ্গে রেখে ঐক্যের আহ্বান যৌক্তিক নয়। বিএনপিকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে থাকবে, নাকি তাদের ত্যাগ করবে। এটা নিয়ে ভেবে দেখার সময় এখনই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দল-মতনির্বিশেষে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপি চাইলে এই আন্দোলনে অংশ নিতে পারে।
এদিকে গুলশান হামলার পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সব ভেদাভেদ ভুলে দল-মতনির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যের মাধ্যমে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে দলটি জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানায়।
সাম্প্রতিক সময়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই শর্ত দেন যে জামায়াতকে ছাড়লে বিএনপির সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী বা জাতীয় ঐক্যের আলোচনা হতে পারে। এর জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের শর্ত আরোপ করায় এটা স্পষ্ট যে সরকার জাতীয় ঐক্য চায় না।
বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়লে রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, বিএনপির জামায়াত ছাড়ার প্রসঙ্গটি রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত অপরিপক্ব বিষয়। এ নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি। তাঁর মতে, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগে থেকেই জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য বিএনপির ওপর দেশি-বিদেশি চাপ ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপির প্রতি এই আহ্বান রেখেছে কয়েকবার। বিকল্পধারা, সিপিবি-বাসদ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট নাগরিকদের অনেকেই দলটির প্রতি এমন আহ্বান রেখেছে। খালেদা জিয়া এর জবাবে বলে আসছিলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া স্থায়ী কিছু নয়। এটা তাঁদের আদর্শগত জোট নয়, আন্দোলন ও নির্বাচনের জোট। গত দুটি সভায় খালেদা জিয়ার সেই অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেল।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, বক্তব্যের রাজনৈতিক সততা প্রমাণ করতে চাইলে ওনাকে প্রকাশ্যে ও স্পষ্টভাবে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, আদর্শগত কারণে সিপিবি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে কোনো জোটে যাবে না। কিন্তু সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপ মোকাবিলার জরুরি প্রয়োজনে ডান, বামসহ সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শক্তিকে একযোগে মাঠে নামতে হবে। সেই আন্দোলনে সিপিবি থাকবে।