লেটুসপাতায় দিন ফিরেছে চাষিদের

নিউজ ডেস্ক: বিদেশি লেটুসপাতা চাষে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন মুন্সীগঞ্জের চাষিরা। সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় বিগত কয়েক বছর ধরে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে বিদেশি এই লেটুসপাতার। প্রাচীন মিসরীয়রা আগাছা থেকে সর্বপ্রথম লেটুসের আবিষ্কার করেন তারপর গ্রিক এবং রোমানদের কাছে তেলসমৃদ্ধ বীজের কারণে এই উদ্ভিজ্জ লেটুসপাতা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা লেটুসের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে এবং বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে লেটুসের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি লাভ করে।
লেটুসপাতা সাধারণত সালাদ, বার্গারের ভেতরে বা স্যান্ডউইচের মাঝে দিয়ে লেটুস পাতা খেয়ে থাকেন। লেটুস কাঁচা ও রান্না উভয়ভাবেই খাওয়া যায়। এতে নানা রকম ভিটামিন ছাড়াও রয়েছে একেবারে কম ক্যালরি। লেটুসপাতা বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন চাইনিজ রেস্তোরাঁয় বহু সুস্বাদু খাবারের সঙ্গে ও খাবারের পাশে ডেকোরেশনের জন্য ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে লেটুসপাতার চাহিদা অত্যন্ত বেশি বিশেষ করে তৈলসমপদে ভরপুর কুয়েত, সৌদি আরব, দুবাই, কাতারে। এই লেটুসপাতা দৈনন্দিন জীবনে ভোজনরসিকরা প্রায় প্রতিবারের খাবার তালিকায় আগ্রহ নিয়ে খেয়ে থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার খাসকান্দি, মদিনাপাড়া, চান্দের চর, এলাকার কৃষি জমিগুলোতে বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী শাক-সবজির পাশাপশি বিঘা বিঘা ক্ষেতে চাষ হচ্ছে এক সময়ের চাইনিজ এ লেটুসপাতার। লেটুসপাতা চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে চাষি মো. লিটন মিয়া দৈনিক মানবকণ্ঠকে জানান, লেটুসপাতা চাষের জন্য জমি ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হয়। লেটুস দুইভাবে চাষ করা যায়। সরাসরি বীজ বুনে আবার বীজতলায় বপন করে উপযুক্ত বয়সের চারা (এক মাস বয়সের) মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব রাখতে হবে ৮ ইঞ্চি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে যে লেটুসপাতার চাষ হয় এটা চাইনিজ। এটার বীজ পাওয়া যায় ঢাকার সিদ্দিক বাজারে। বীজগুলো চওড়া দামে কিনে আনতে হয়। লেটুসপাতা লাগানোর এক দেড় মাসের মধ্যেই খাবারের উপযুক্ত হয়ে যায়। যাত্রাবাড়ী শ্যামবাজার কাওরানবাজারে পিস হিসেবে বিক্রি হয়। প্রতি পিস ১০-৫০ টাকা হারে বিক্রি করা যায় লেটুসপাতা। এই পাতা চাষে তেমন খরচ গুনতে হয়না। শ্রমিকের মজুরি, জমি চাষ, সার, কীটনাশক ও নানা আনুষঙ্গিক খরচ আয়ত্তের মধ্যেই থাকে। আর বারো মাসই চাষের উপযুক্ত বলে এখানে অন্যান্য শাক সবজির তুলনায় লেটুসপাতার চাষ বেড়েছে।’
বিদেশি এই লেটুসপাতা চাষের জন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোনো প্রকার পরামর্শ কিংবা সহযোগিতা পাননি বলে জানান স্থানীয় চাষিরা। আক্ষেপ করে তারা বলেন, ঢাকা মাওয়া মহাসড়ক থেকে খুব কাছে হওয়া সত্ত্বেও রাস্তাঘাটের বেহালদশা। খানাখন্দে ভরপুর এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতির কারণে সময়মতো ডেলিভারি দিতে না পারায় আর্থিকভাবে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, ‘উপজেলায় এক হেক্টরেরও বেশি জমিতে লেটুসপাতা চাষ হয়। লেটুসপাতা চাষে কৃষি অফিস থেকে কোনো অনুদান দেয়া হয় না। তবে তারা যদি কোনো পরামর্শ ও সহযোগিতা চান আমরা দিতে আগ্রহী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বদিউজ্জামান বলেন, ‘লেটুসপাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি রয়েছে। তাই এটি বেশ উপকারী সুষম খাদ্য।’