যানজটে ঢাকায় বছরে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্টে ৩৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি

নিউজ ডেস্ক : ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম বিশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থার একটি। নগরীটির ভয়াবহ যানজটে জনগণ অর্থনৈতিক, শারিরিক এবং মানসিক সংকটে পরে। শহরটির নাগরিকরা গড়ে কর্মঘন্টার ২৫ শতাংশ যানজটে আটকে থেকে নষ্ট করে। ঢাকার গাড়িঘোড়ার গতি ঘন্টায় ৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। যা হাটার গতির সমান।
বুয়েটের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ট্রাফিক জ্যামে প্রতিবছর ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। যাতে আর্থিক ক্ষতি হয় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এটি শুধু দেরি হওয়ার আর্থিক মূল্য। এর বাহিরেও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঢাকায় দূর্ঘটনার কারণে প্রতি মাসে ২৫ জনের মৃত্যু ঘটে। উচ্চশব্দের হর্ণ এবং বায়ু দূষণের কারণে নগরীর ৭৩ শতাংশ নাগরিক শারিরীক ও মানষিক সমস্যায় ভোগে। ঢাকার ট্রাফিক যন্ত্রনা বিদেশী নাগরিক ও গণমাধ্যমেরও অজানা নয়। ২০১৬ সালে জোডি রোসেন নিউইয়র্ক টাইমস এর এক নিবন্ধে লেখেন, ‘আমি ঢাকায় ছিলাম। ্সলে আমি যানজটেই আটকে ছিলাম। এভাবেও বলা যায়, আমি যানজটে আটকে ছিরাম মানে আমি ঢাকায় ছিলাম। ঢাকার যানজট সর্বোচ্চ যানজট। এটাই এখন এই শহরের পরিচয়। ঢাকার যানজট অসহ্য। এটি দারিদ্র, এটি অন্যায়, এটি অসহ্য।’
ঢাকার আয়তন অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে এটি বেড়েছে অপরিকল্পিতভাবে। যে কোন শহরের জন্য আতনের ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর ঢাকায় আছে মাত্র ৭.৫ শতাংশ রাস্তা। প্যারিস আর ভিয়েনায় রাস্তা রয়েছে ২৫ শতাংশ। ওয়াশিংটন আর শিকাগোতে এর পরিমাণ ৪০ শতাংশ। ঢাকার জন্য আরো একটি বড় সমস্যা হলো বিচিত্র গতির যানবাহন। এখানে একই সঙ্গে রিক্সা, মোটরগাড়ি, স্কুটার, হিউম্যান হলার, ঘোড়াগাড়ি, সিএনজি চলিত অটোরিক্সা, প্রাইভেট কার চলাচল করে। প্রতিবছর শহরটিতে অতিরিক্ত ৩৭ হাজার গাড়ি যোগ হচ্ছে। আর শহরটিতে চলাচল করা ৭ লাখ রিক্সা অন্য যানবাহনের গতিও কমিয়ে দিচ্ছে। ঢাকায় গণপরিবহণ বলতে কিছুই নেই। বিআরটিসির মালিকানায় রয়েছে মাত্র ১ হাজার বাস। যা পুরো দেশের মোট যানবাহনের মাত্র ০.১ শতাংশ। কমপক্ষে এত তৃতীয়াংশ বিআরটিসি বাস প্রায়ই নষ্ট পরে থাকে। নগরীর ৬০টি বেসরকারী বাস কোম্পানি ৩৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহণ করে থাকে। ড্রাইভারদের অর্ধেকেরই লাইসেন্স নেই।
সরকার ২০ বছরের মধ্যে ঢাকার ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা দূর করতে চায়। তাদের নেওয়া উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ৫টি স্কাই মেট্রো রেল লাইন। প্রথম লাইনের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু অন্যগুলো এখনও দৃশ্যমান নয়। সরকার বেশ কিছু ফ্লাইওভার এবং ইউলুপ নির্মঅন করেছে। আরো নির্মানকাজ চলছে। এত হয়তো ব্যাক্তিগত গাড়ির গতি কিছুটা বেড়েছে, তবে সমস্যা পুরোপুরি কমেনি। ঢাকার যানজট কমাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বাসস্ট্যান্ড ব্যবস্থাপনা। নগরীটিতে সেই অর্থে বাসস্টপ নেই। গতিময় এবং স্বল্পগতি যানবাহনের জন্য আলাদা নির্দেশিকা তৈরী করা জরুরী। মানুষ নিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকবে না তা সয়ংক্রিয় হবে, তা নির্ধারণ জরুরী। পার্কিং আইন খুব কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। অবকাঠামো নির্মানের সময়সীমা কমাতেই হবে। এই কঠিন কাজগুলো করতে পারলে নগরীটির যানজট কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।