মিনিকেট চালের নামে চলছে চালবাজি, নজর নেই কর্তৃপক্ষের
নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের(ব্রি) মহাপরিচালকের দপ্তরের সিনিয়র লিয়াজো অফিসার কৃষিবিদ এম. আব্দুল মোমিন জানালেন, বাজারের সবচেয়ে জনপ্রিয় চালের নাম মিনিকেট। ঝকঝকে, ঝরঝরে চিকন এই চালের দাম কিছুটা বেশি হলেও ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ মিনিকেট। কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হল পৃথিবীতে মিনিকেট নামে কোন ধানের জাতই নেই। অথচ বাজারে মিনিকেট চালের ব্যবসা চলছে রমরমা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মিনিকেট চাল আসে উত্তর বঙ্গের শস্যভা-ার দিনাজপুর থেকে। এখানে এক শ্রেণির চাল কলের মালিক মোটা চাল থেকে মেশিনের মাধ্যমে চাল সরু এবং চিকন করে মিনিকেট বলে চালিয়ে দিচ্ছে বাজারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ‘মিনিকেট’ নামে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত কোনো জাতের ধান নেই। ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫০, ব্রি হাইব্রিড ধান ও কাজল লতা জাতের ধান ছেঁটে মিনিকেট বলে বস্তায় ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে এ চালের ব্যাপক চাহিদার জন্য ‘মিনিকেট’ নামে প্রতারণার ব্যবসা চলছে জমজমাট। ১৯৯৫ সালে পাশের দেশ ভারতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে সে দেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন জাতের চিকন ‘শতাব্দী’ ধানবীজ বিতরণ করে। মাঠপর্যায়ে চাষের জন্য কৃষকদের এ ধান বীজের সঙ্গে আরো কিছু কৃষি উপকরণসহ একটি মিনি প্যাকেট দেয়া হয়। ওই প্যাকেটটাকে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বলতো ‘মিনি কিটস’। সেখান থেকেই ‘শতাব্দী’ ধানের নাম হয়ে যায় ‘মিনিকেট’। তবে নামের পেছনে ঘটনা যাই থাক, মিনিকেট নামে কোনো চালের জাত নেই এটাই বাস্তবতা। খোঁজ নিয়ে মিনিকেট চাল বানানোর একটা যান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেছে।
অটোরাইস মিলে এমন অতিবেগুনি রশ্মি রয়েছে যার ডিজিটাল সেন্সর চাল থেকে সকল কালো চাল, পাথর, ময়লা সরিয়ে ফেলে। এর পর এই চাল চলে যায় অটোমিলের বয়লার ইউনিটে। সেখানে ৫টি ধাপে মোটা চাল সাদা রং ধারণ করে। এরপর পলিশিং মেশিনে মোটা চাল কেটে চিকন করা হয়। আর চকচকে করার জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কেমিক্যাল যা মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।
এক সময় বরিশালে বালামের সুনাম ছিল সারা ভারত উপমহাদেশ জুড়ে। কালের বিবর্তনে এসব সরু জাতের ধান চাষ উঠে যায়। তবে সরু চালের সন্ধান করতে থাকে ক্রেতারা। এসময় বাজারে কথিত মিনিকেটের আর্বিভাব ঘটে। ক্রেতারা লুফে নেয় এ সরু জাতের চাল। সুযোগ বুঝে একশ্রেণির মিলমালিক মাঝারি সরু ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯ ও ব্রি ধান৩৯ জাতের ধান ছেঁটে মিনিকেট বলে বাজারজাত করতে শুরু করে।
যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়ার খাজানগর, পাবনা, নওগাঁ প্রভৃতি স্থানের চালকল থেকে সারাদেশে কথিত মিনিকেট চালের সরবরাহ করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহ মেছুয়া বাজারের আড়তদাররা জানান, অটো রাইচমিল মালিকরা কথিত মিনিকেট বলে যে চাল সরবরাহ করছে তারাও মিনিকেট বলে তাই বাজারে বিক্রি করছেন। তবে এ নামে সরকার অনুমোদিত কোনো জাতের ধান নেই। বছর খানেক আগে সুপার ফাস্ট নামে বোরো মৌসুমে চাষের জন্য ভারতের ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউট একটি সরু জাতের ধান অবমুক্ত করে। এ ধানের চাল একশ্রেণির মিলমালিক সুপার মিনিকেট বলে এখন বাজারে বিক্রি করছে। এ চাল কথিত মিনিকেটের চেয়ে আরো বেশি চিকন। দেশব্যাপী মিনিকেট চালের নামে যে চালবাজি চলছে তা কেবল ক্রেতাদের মাঝে সচেতনতা বাড়লেই নিরসন সম্ভব।