আরবিয়া (বুধবার), ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বিএনপির সর্বশেষ অবস্থান জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

নিউজ ডেস্ক: আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বশেষ অবস্থান জানতে সিরিজ বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এক মাসের ছুটিতে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন তিনি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির পর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া এবং অবস্থান সম্পর্কে পররাষ্ট্র দপ্তরকে অবহিত করতে এ সিরিজ বৈঠক করছেন রাষ্ট্রদূত। রোববার সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকের পর গতকাল মঙ্গলবার রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

দুপুরে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে মিলিত হন রাষ্ট্রদূত। বৈঠকে বিএনপির বর্তমান অবস্থান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আগামী নির্বাচনসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির সর্বশেষ অবস্থান কী জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

জবাবে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নেই। এ দাবিতে শতভাগ অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। আন্দোলনের মাধ্যমে এ দাবি আদায় করবে তাঁরা। দাবি পূরণ ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। এ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত দুটি জাতীয় ও স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়– তবে যে কোনো ধরনের সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি কাম্য নয় বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি যাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে পিছিয়ে না পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে দেখতে চায় বলে জানান তিনি।
বৈঠকের বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে জানান, সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান খুবই স্পষ্ট এবং বিষয়টি আবারও মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করা হয়েছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যাপারে তাঁরা শতভাগ অনড় অবস্থানে রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আমন্ত্রণে তিনি সেখানে যান এবং ঘণ্টাব্যাপী সেখানে অবস্থান করেন। এ সময় তাঁরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন এবং নতুন মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি পিটার হাসকে জানান, নতুন মার্কিন ভিসা নীতি বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক। সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের অপকর্ম ও অপশাসনের কারণে এমনটি হয়েছে। তবে দেশের মানুষ একে স্বাগত জানিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বৈঠক প্রসঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র শন ম্যাকিনটোশ এক ই-মেইলে  বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তাঁরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচার, প্রক্রিয়াসহ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপুর্ণ অগ্রাধিকারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা।

গত রোববার সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। মার্কিন দূতের গুলশানের বাসভবনে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে জাপার নির্বাচন পরিকল্পনা, আগামী নির্বাচনে জোট করবে কিনা, জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাপার নির্বাচন পরিকল্পনা জানতে চান পিটার হাস। জবাবে জি এম কাদের জানান, তাঁর দল নির্বাচনে অংশ নেবে। জোট করে ভোট করার পরিকল্পনা আছে কিনা– তা রাষ্ট্রদূত জানতে চাইলে জাপা চেয়ারম্যান বলেছেন, ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।

অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখনও বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ হয়নি। এ বিষয়ে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ গতকাল সমকালকে জানান, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের কোনো দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি।

এর আগে গত ২৪ মে মার্কিন নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পরদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ওই বৈঠকে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দল বিএনপির প্রতিনিধিরা অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।

Facebook Comments Box