বছরে একবার দাম বাড়ানোর নিয়ম থাকলেও গত বছরের নভেম্বরে ও জুলাইয়ে দুই দফায় পানির দাম বাড়ানো হয়। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, জুলাইয়ের পর এ বছর আরও এক দফা দাম বাড়ানো হবে।
এখন আবাসিক প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম সাড়ে ১০ টাকা। বাড়ানোর পর দাম হবে ১১ টাকা ২ পয়সা। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট ৩৩ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে দিতে হবে ৩৫ টাকা ২৮ পয়সা।
বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে প্রতি ইউনিট পানির দাম ছিল পৌনে ছয় টাকা। প্রতিবছর একাধিকবার এবং মাঝেমধ্যে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমোদনে বাড়ার ফলে পানির দাম দ্বিগুণের বেশি দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালের নভেম্বরে একবারেই ১৭ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়।
পানির দাম আবার বাড়বে জেনে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এখন অনেক এলাকায় ময়লা ও দুর্গন্ধময় পানি আসছে। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার ও আশপাশের এলাকা, বৃহত্তর মিরপুর, মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা, বাসাবো, কদমতলা, আহম্মদবাগ, মাদারটেক, মুগদা, মান্ডা, মানিকনগর, গোপীবাগ, অভয় দাস লেন, কে এম দাস লেন প্রভৃতি এলাকায় পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ রয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
পানির দাম বাড়াতে হলে পানির মান ভালো করার কথা বলেছেন মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের ১২ নম্বর সড়কের বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ওয়াসার পানির গন্ধের জন্য গোসল পর্যন্ত ঠিকভাবে করা যায় না। অথচ সেই পানিরই দাম বাড়াতে ওয়াসা কখনো ভুল করে না।
বাসাবোর বাসিন্দা অনামিকা মাহবুব বলেন, প্রতি মাসে ওয়াসার পানির বিল দিতে হয় হাজার টাকার ওপর। এবার আরও বেশি দিতে হবে। কিন্তু রান্না ও খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে প্রতি মাসেই বাড়তি টাকা গুনতে হয়।
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা ওয়াসার প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায় বলেন, জুলাই থেকে পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী ওয়াসা বোর্ড প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়াতে পারে। পানির উৎপাদন খরচ ও পরিচালনা ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে দাম বাড়তে হচ্ছে। তিনি জানান, এখন ১ হাজার লিটার পানি উৎপাদনে খরচ হয় ১৭ টাকা। উৎপাদন ও রাজস্ব আয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে এ বছরই পানির দাম আরও একাধিক দফা বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘আমরা মনে করি, ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। এসব ক্ষেত্রে চোর ধরতে পারলে ঘন ঘন পানির দাম বাড়াতে হবে না। একটি নিরপেক্ষ স্বাধীন সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়ে গণশুনানির মাধ্যমে পানির মূল্য নির্ধারণ করা উচিত।