প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে এ অপরাধের শাস্তি ১০ বছর করাসহ ৯ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই সুপারিশ করে সংগঠনটি।
তাদের সুপারিশের মধ্যে প্রথমটি হলো, পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) (সংশোধন) ১৯৯২ এর ৪ ধারা আবারও সংশোধন করে শাস্তির মাত্রা আগের মতো সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান প্রণয়ন এবং নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
৯ দফা সুপারিশমালার অন্যগুলো হচ্ছে:
১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ এর অস্পষ্টতা দূর করা এবং কোচিং বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা।
২. প্রশ্ন ফাঁস রোধ ও সৃজনশীল পদ্ধতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গাইড বইয়ের আদলে প্রকাশিত সহায়ক গ্রন্থাবলি বন্ধে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
৩. তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে তদারকি বাড়ানো ও প্রচলিত আইনের অধীনে শাস্তি নিশ্চিত করা।
৪. ধাপ কমিয়ে প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণের কাজটি পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা এবং পরবর্তীতে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৫. প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনসমূহ জনসম্মুখে প্রকাশ এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬. শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি এবং ব্যবস্থাপনাগত যেকোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
৭. প্রশ্ন ফাঁস রোধে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে তুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
৮. পাবলিক পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে প্রশ্নপত্রের একাধিক সেট রাখা।
মানববন্ধনে টিআইবির রিসার্চ ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টিকে ক্ষুদ্র দুর্নীতি মনে হলেও এর ভবিষ্যৎ প্রতিক্রিয়া মারাত্মক ভয়াবহ ও সুদীর্ঘ। শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রেও এর জের টানতে হয়। বছরের পর বছর পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের যে ‘দুষ্ট ঐতিহ্য’ তৈরি হয়েছে তা থেকে দেশকে মুক্ত করতে না পারলে সুশাসন ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সুদূর পরাহত থেকে যাবে।’
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির সিভিক এনগেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ফারহানা ফেরদৌস এবং অর্থ ও প্রশাসন বিভাগের পরিচালক আবদুল আহাদ। এ ছাড়া টিআইবির সদস্য, টিআইবির অনুপ্রেরণায় ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্যসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, টিআইবি কর্মী ও নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ঢাকার বাইরে আরও ৪৫টি অঞ্চলে একযোগে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অব্যাহত প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে গত ৫ আগস্ট ২০১৫ তারিখে টিআইবি ‘পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস: প্রক্রিয়া, কারণ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত সুবিধাভোগীরা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন বিতরণ বা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে। পাশাপাশি প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এক ধরনের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ওই প্রতিবেদনেও টিআইবি প্রশ্ন ফাঁস রোধে বিভিন্ন সুপারিশ করেছিল যা ইতিমধ্যে সরকার আংশিক বাস্তবায়ন করেছে।