জুমুআ (শুক্রবার), ০১ ডিসেম্বর ২০২৩

নির্বাচনকে সামনে রেখে রাস্তাঘাট ঠিক করছেন সরকার

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সড়ক, সেতু ও হাটবাজার উন্নয়নে সরকারের মনোযোগ বেশি। তাই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, রেলপথসহ পরিবহন খাতে প্রায় ৬৭ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখেই রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণ ও মেরামতের মতো জনতুষ্টির প্রকল্প বাস্তবায়নেই বেশি টাকা খরচ করতে চায় সরকার। কারণ এসব কাজ করলে তা সহজেই এলাকার জনগণের কাছে দৃশ্যমান হয়।

আগামী বছরের শেষ দিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এটাই পূর্ণাঙ্গ অর্থবছর। তাই চলতি অর্থবছরই হবে ভোটার আকৃষ্ট হতে পারে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নের বড় সুযোগ।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪১ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এটা বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দের চেয়ে ৬৭ শতাংশ বেশি।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, রাস্তাঘাট তৈরির প্রকল্পে বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কারণ এ ধরনের প্রকল্প দ্রুত দৃশ্যমান করা যাবে। এ ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে ‘কাজ দেখানো’ গেলে তা নির্বাচনী প্রচারণায় সুফল আনতে পারে। তিনি আরও মনে করেন, এ ধরনের রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে সহজেই রাজনৈতিকভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ঠিকাদারি কাজ দেওয়া যায়। এ ছাড়া এসব প্রকল্পে দুর্নীতির সুযোগও বেশি থাকে।

মির্জা আজিজ আরও বলেন, সড়ক, সেতুসহ অবকাঠামো নির্মাণে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা কতটা আছে, তা দেখতে হবে। গত অর্থবছরে এসব প্রকল্পে পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয়। তাই এক লাফে এত বরাদ্দ বাড়ানো ঠিক নয়।

 সড়ক, সেতুতে বরাদ্দ বেড়েছে ৬৭%

চলতি অর্থবছরের এডিপিতে পরিবহন খাতে ৪১ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা বা ৬৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের ৪১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে সড়ক, সেতু, রেলসহ ১৭১টি চলমান প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ৮৭টি চলমান প্রকল্প আছে, যার মধ্যে ৪১টি প্রকল্প গত দেড় বছরে পাস করা হয়েছে। এই প্রকল্প তালিকায় বিভিন্ন এলাকার আঞ্চলিক সড়ক, জেলা সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ ও উন্নয়নের প্রকল্পই বেশি। এ ছাড়া সড়ক-মহাসড়কের সেতু নির্মাণের প্রকল্পও আছে।

বছরজুড়েই নতুন নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পরে পাস হওয়া নতুন প্রকল্পগুলো এডিপিতে ঢুকে পড়ে। এ জন্য প্রতিবারই এডিপি বইয়ে শত শত বরাদ্দহীন অননুমোদিত প্রকল্প রাখা হয়। এবার পরিবহন খাতে এমন ২২২টি প্রকল্প আছে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণের প্রকল্প আছে ১৩৩টি। এই প্রকল্পগুলোর মধ্য থেকেই সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সারা বছর প্রকল্প পাস করবে। এসব নতুন প্রকল্পের জন্য সব মিলিয়ে ১ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম বলেন, এটি নির্বাচনী এডিপি নয়। এ দেশে অনেক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। জায়গা ঠিক করা হয়েছে। এখন এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে রাস্তাঘাট তৈরি করতে পরিবহন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।

 গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ বেড়েছে ২০%

 গ্রাম এলাকার ছোট ছোট রাস্তা তৈরি ও উন্নয়ন এবং গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে শুধু এলজিইডির ৮৭টি প্রকল্পে ৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। গতবার এলজিইডির প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা।

এলজিইডি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সড়ক নির্মাণ করে থাকে। এর পাশাপাশি হাটবাজারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করে থাকে।

চলতি এডিপিতে বরাদ্দহীন ও অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে ২১টি প্রকল্প বাছাই করা হয়েছে। একটি প্রকল্প হলো সারা দেশের গ্রামীণ বাজার উন্নয়ন প্রকল্প, যা চলতি জুলাই মাস থেকে শুরু করে ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ করতে চায় সরকার। একই সময়ে সারা দেশের উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে ১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের সব সেতু ও কালভার্ট নতুন করে নির্মাণের প্রকল্পও বাছাই তালিকায় আছে।

 শামসুল আলমের মতে, এখনো এ দেশের উৎপাদন কেন্দ্রগুলো গ্রামেই বেশি। এই কেন্দ্রগুলোকে মূলধারার বাজার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এবারের এডিপিতে কাঁচা রাস্তা পাকা করা এবং মহাসড়কগুলো প্রশস্ত করার প্রকল্পগুলোই বেশি।

Facebook Comments Box