নামায গুণাহ মাফের ও আল্লাহ পাক এর নৈকট্য প্রাপ্তির মাধ্যম
মহান আল্লাহ পাক বলেন “আপনি আপনার পরিবারবর্গকে নামাজের জন্য আদেশ দিন এবং তার উপর দৃঢ় থাকুন।” (পবিত্র সূরা ত্বোয়া-হা ,১৩২)
আলোচ্য আয়াত শরীফ এর মধ্যে মহান আল্লাহ পাক প্রত্যেক ব্যক্তিকেই নামায আদায় করার সাথে সাথে তার পরিবারবর্গকেও নামাজের জন্য আদেশ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তির উপরই এটি ফরয যে, সে নিজে নামাযসহ ইসলামী শরীয়তের অন্যান্য যাবতীয় আহকাম পালন করার সাথে সাথে তার পরিবারবর্গ ও অধীনস্থদেরও পালন করার নির্দেশ দিবে। কারণ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ এ ইরশাদ করেছেন, “জাহান্নামের অগ্নি থেকে নিজে বাঁচ এবং পরিবারবর্গকে বাঁচাও।” (পবিত্র সূরা তাহরীম, আয়াত ৬)
আলোচ্য আয়াত শরীফ এর তাফসীরে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও এবং দশ বছর বয়সে পৌঁছে নামায আদায় না করলে তাদেরকে প্রহার কর।” (আবু দাউদ, শরহে সুন্নাহ্, মেশকাত)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটিই প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে ও তার অধীনস্থদেরকে যথাযথভাবে নামায আদায় করা ও করানো অবশ্য কর্তব্য বা ফরজে আইন। কারণ মহান আল্লাহ পাক কালামে পাকে বলেছেন, “নিশ্চয়ই নামায (মানুষকে) সকল ফাহেশা ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখে।” অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি হাক্বীক্বীভাবে নামায আদায় করে, তাহলে তার পক্ষে কোন প্রকার গুণাহর কাজে লিপ্ত হওয়া সম্ভব নয়।
তাছাড়া দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করার দ্বারা সমস্ত গুণাহ্খাতা মাফ হয়ে যায়। এ সম্পর্কে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা কি ধারণা কর? যদি তোমাদের কারো ঘরের সম্মুখে একটি নহর (পানির নালা) থাকে, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে? ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ বললেন- না, তার শরীরে কোন ময়লা থাকবেনা। নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটিই হলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মেছাল বা দৃষ্টান্ত, মহান আল্লাহ পাক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দ্বারা সমস্ত গুণাহ্ মাফ করে দেবেন।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অন্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমুয়া হতে অন্য জুমুয়া, এক রমজান শরীফে রোজা হতে অন্য রমজান শরীফে রোজা, এর মধ্যের সমস্ত (ছগীরা) গুণাহ মার্জনাকারী। যখন সে ব্যক্তি কবীরা গুণাহ হতে বিরত থাকে।”
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার শীতকালে বের হলেন। (তখন) গাছের পাতাসমূহ (শীতের কারণে) ঝরে পড়ছিল। নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গাছের দু’টি ডালা ধরলেন, তখন উক্ত ডালাদ্বয়ের পাতাসমূহ ঝরে পড়তে লাগলো। বর্ণনাকারী বলেন, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আবূযর! আমি বললাম, হে মহান আল্লাহ পাক এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি উপস্থিত আছি। তখন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কোন মুসলমান যখন একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্যই নামায আদায় করে, তখন তার গুণাহ্সমূহ এমনভাবে ঝরে যায়, যেমন এই বৃক্ষের পাতাসমূহ ঝরে পড়ে গেল।” (আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে, কোন ব্যক্তি নিজে তার পরিবারবর্গ ও অধিনস্থদেরসহ যথাযথভাবে নামায আদায় করলে তাদের সকলেরই গুণাহ্খাতা মহান আল্লাহ পাক মাফ করে দিবেন। আর যাদের যাবতীয় গুণাহ মাফ করা হবে, তারাই হবে মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্যশীল বান্দা।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে নামাজের মাধ্যমে যাবতীয় গুণাহ মাফ করায়ে উনার রেজামন্দী ও নৈকট্য হাছিল করার তৌফিক দান করুন।
লিখেছেন: মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক