তিস্তায় তীব্র ভাঙন, বিলীন ঘর জমি গাছপালা
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা: গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে কুড়িগ্রামে রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন।
স্থানীয়রা বলছে, গত তিনদিনে ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে তিস্তা পাড়ের বিঘার পর বিঘা বোরো ধান, গাছ ও বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরও প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার ভাঙন হুমকিতে রয়েছে।
তাছাড়া গত কয়েক বছর ধরে তিস্তার ভয়াবহ আগ্রাসনে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, মন্দির, ডাংরারহাট, রামহরি, পাড়ামৌলা ও গাবুর হালান গ্রামের একাংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেও প্রতিকার মেলেনি বলে অভিযোগ তাদের।
ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহম্মদ আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক হানান বলেন, তার ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে গেলে তাদের বাজেট নেই বলে জানিয়েছেন।
এদিকে নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি ভিটেমাটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের অনেক মানুষ।
ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের মোস্তাক আহমেদ বলেন, “গতবার নদী বাড়িভিটা সউগ খায়া গেইল। হালের গরু বিক্রি করি নতুন বাড়ি করনু। এবারও ভাঙবের নাগছে। কামলা দিয়া খাং। এই বাড়ি গেইলে করিম কি। মোর পকেটোত বিষ খাওয়ার মত টেকা নাই।”
একই ইউনিয়নের গতিয়াসাম এলাকার সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম বলেন, “বর্ষা আসার আগেই হঠাৎ করে ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালাসহ আধাপাকা বোরো ধানক্ষেত। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৮টি মসজিদ ও একটি মাদ্রাসাসহ শত শত বিধা আবাদী জমিন।
বর্তমানে এই ইউনিয়নে গতিয়াসাম, রামহরি, কালিরহাট ও মেদনীপুর গ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায়নি। তারা বলছে, এই মুহুর্তে তাদের কাছে কোন বাজেট নাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, হঠাৎ বৃষ্টির ফলে তিস্তায় অরক্ষিত এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলার তিনটি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে আগ্রাসি তিস্তা নদী। প্রায় ৪০ কিলোমিটার ব্যাপী এই নদীর ভাঙন কবলিত বাম তীরে মাত্র ৫ কিলোমিটার জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাকী ৩৫ কিলোমিটার উন্মুক্ত নদীর অনেক জায়গায় চলছে এখন ভাঙন।
তিস্তায় ভাঙন ঠেকাতে মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে বাজেট না থাকায় সে কাজে এখনই হাত দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।