তাইওয়ানে বিধ্বস্ত ভবনে আটকে আছে শতাধিক: নিহত ১৮
তাইওয়ানের তাইনান শহরে ভূমিকম্পে ধসে যাওয়া ১৭ তলা ভবনে এখনো ১৩২ জন মানুষ আটকে আছেন।
তাইওয়ানে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত বহুতল ভবনে উদ্ধারকাজ চলছে। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া বিপন্ন মানুষগুলোকে উদ্ধারে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছে উদ্ধারকর্মীরা।
দেশটির কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
শনিবার ভোরে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের তাইনান শহরে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয় ১৬তলা ভবনসহ আরও কয়েকটি বহুতল ভবন।
আজ রোববার সকালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জনে পৌঁছেছে।
নিহত ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জন ধসের সময় ১৬ তলা ভবনের ভেতরে মারা যায়। তাদের মধ্যে ১০ দিনের একটি মেয়েশিশুও রয়েছে। নিহতদের মধ্যে আরও দুজন শিশু আছে। বিধ্বস্ত ভবনের বাসিন্দাদের স্বজনেরা চোখে জল নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।
তাইনানের মেয়র উইলিয়াম লাই ভোরে বলেন, তারা ধারণা করছেন ভবনের ধ্বংসস্তূপে প্রায় ১৩২ জন বাসিন্দা আটকা আছে। তাদের মধ্যে ১০৩ জন অনেক গভীরে চাপা পড়েছে। তাদের উদ্ধার করে আনা খুবই কঠিন।
লাই আরও বলেন, ভবনের কিছু অংশ দুমড়েমুচড়ে পাশের দুটি টাওয়ারের নিচে পড়েছে। সেখানে আটকে পড়াদের উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ভূমিকম্পে বহুতল ভবন ও এর আশপাশের ভবনের কাঠামো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দুমড়েমুচড়ে যাওয়া টাওয়ারগুলোতে কিছু সংস্কারকাজ করে উদ্ধারের জন্য খননকাজ করতে হচ্ছে উদ্ধারকর্মীদের।
তাইনানের ফায়ার ডিপার্টমেন্ট বলছে, এখনো ১২৭ জন নিখোঁজ রয়েছে।
সরকারি হিসেব বলছে, ওই ভবনে ২৬০ জন বাসিন্দা ছিল। তবে মেয়র লাই বলছেন, তাঁর ধারণা ভূমিকম্পের সময় সেখানে ৩০০ জন বাসিন্দা ছিল। নতুন চান্দ্রবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে অনেকেই ছুটিতে বাড়ি এসেছিল। অনেকের আত্মীয়স্বজনও বেড়াতে এসেছিল। ১৬ তলা ওই ভবনটিতে ১০০ টির মতো ফ্ল্যাট ছিল।
আবাসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, অনেক শিক্ষার্থী নিবন্ধন না করেই ওই ভবনে ভাড়াটে হিসেবে ছিল। ক্রেন, মই, শিকারি কুকুর ব্যবহার করে এর মধ্যে ২৫০ এর বেশিজনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া ৪৮ বছরের সু ই মিং এএফপিকে বলেন, ওয়ে কুয়ান কমপ্লেক্স নামে ওই ১৬ তলা ভবনের ছয়তলায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন। যখন ভূমিকম্পে সবকিছু দুলছিল, প্রচ- ঝাঁকুনি হচ্ছিল তখন তার মাথা শূন্য হয়ে গিয়েছিল। শুধু এটুকু মনে করতে পারেন যে, ছাদ মাথার ওপর নেমে আসছিল। উদ্ধারকর্মীরা যাতে শুনতে পায় সে জন্য অনেক জোরে জোরে ভেঙে পড়া দরজায় শব্দ করছিলেন তিনি। পরে জানলা দিয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ তাকে উদ্ধার করে উদ্ধারকর্মীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে গতকাল জানিয়েছে আঘাত হানা ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬ দশমিক ৪। তাইওয়ানে এর আগেও ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ২০১৩ সালে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশটিতে চারজনের মৃত্যু হয় ও ব্যাপক ভূমিধস হয়। ১৯৯৯ সালে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশটিতে ২ হাজার ৪০০ জন প্রাণ হারায়।