বিমানবন্দরে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীসহ সারাদেশে চতুর্থ দিনের মতো চলা আন্দোলনে বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গায়ে কাটা দেওয়া একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে ঘুরছে। সেই ভিডিওটি শেয়ার করে সবাই গাড়ি চালকের অমানবিকতা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শনিরআখড়ায় একটি পিকআপ ভ্যান থামায়। লাইসেন্স না থাকায় ছাত্ররা গাড়িটি ভাঙতে থাকে। এ সময় হঠাৎই চালক দ্রুত বেগে এক ছাত্রের উপর দিয়ে গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে চলে যায়।
ভিডিওটি যারা দেখেছেন, তারা সবাই হয়তো মনে মনে একটাই কথা বলেছেন, এই ছেলে আর বাঁচবে না। বিভিন্ন মহলে এমন গুঞ্জনও উঠেছিল যে আন্দোলনরত ছেলেটি আর বেঁচে নেই।
কিন্তু অলৌকিকভাবেই বেঁচে গেছে সেই ছেলেটি, ঠোঁট ও পায়ে গুরুতর আঘাত পেলেও ফয়সাল নামের সেই ছাত্র আশঙ্কামুক্ত আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ফয়সাল নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি এখন সিদ্ধিরগঞ্জের প্রি-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি আছেন। জানা গেছে, মুখে আঘাত লাগায় কথা বলতে পারছেন না ফয়সাল। পায়ে ফ্র্যাকচারও রয়েছে।
হাসপাতালটির ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নাছির উদ্দিন কাজল জানান, মুখে আঘাত লাগায় ঠিকমত কথা বলতে পারছে না ফয়সাল। পায়ের একটি অংশ ভাঙা।
এছাড়া তার পেটেও প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখা গেছে তার মূত্রথলীতে কিছু ব্লাড জমে আছে। এগুলো দেখে মনে হচ্ছে তার গার্ড বা ব্লাডার ইনজুরি হয়ে থাকতে পারে। এটা নিশ্চিত হতে সিটিস্ক্যান করতে দেয়া হয়েছে।
সিটিস্ক্যান রিপোর্টটা পেলে বলা যাবে আসলে কি সমস্যা হয়েছে তার পেটে। এছাড়া পায়ের একটি অংশ ভেঙে গেছে। সেটা অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ দেখে যাবতীয় নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
সিটিস্ক্যান রিপোর্টটা দেখে যদি মনে হয় তার চিকিৎসা এখানে করা সম্ভব তাহলে আমরা রাখবো, আর না হলে অন্য কোথাও শিফট করবো।
ফয়সালের বাবা শামসুল হক জানান, সকালে কলেজে যাওয়ার কথা বলে ফয়সাল বাসা থেকে বের হয়। পরে সাড়ে ১০টার দিকে আমি জানতে পারি তাকে ট্রাক চাপা দিয়েছে।
আমাদের বাসা কদমতলীতে, কিন্তু ঘটনার সময় আমি মতিঝিলে ছিলাম। খবর পেয়ে হাসপাতালে দৌড়ে আসি। চিকিৎসকরা বলেছেন ও শঙ্কামুক্ত আছে, এর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।
আজ সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের যাত্রাবাড়ী এলাকায় পিকআপ ভ্যান আটকে দেয় ছাত্ররা। এসময় একজন ছাত্র হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ভ্যানের হেডলাইট ভেঙে দিতে দেখা যায়।
এরপর চারপাশ থেকে ঘিরে থাকা গাড়িটি সামনে ফাঁকা রাস্তা দেখে ধীরগতিতে আগাতে থাকে। কয়েকজন ছাত্র চারপাশ থেকে গাড়িটিতে ঝুলে থাকে আর একজন সামনে অবস্থান নিয়ে লাঠি দিয়ে কাঁচে আঘাত করে।
কিন্তু গাড়িটির চালক সামনে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে হঠাৎ জোরে চালিয়ে নিয়ে যান। তখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পাশে সরে যেতে পারলেও ফয়সাল ট্রাকের নিচে পড়ে যান। তাকে চাপা দিয়েই দ্রুত চলে যায় পিকআপটি।
ঘটনার পর ছাত্ররা ফয়সালকে উদ্ধার করে সিদ্ধিরগঞ্জে সাইনবোর্ড এলাকা প্রি-অ্যাকটিভ মেডিকেলে নিয়ে যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডেমরা অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম জানান, ওই হাসপাতালে আমাদের একজন অফিসার পাঠিয়েছিলাম।
হাসপাতালের ডাক্তার বলেছে সে শঙ্কামুক্ত। মুখে তার কথা বলতে একটু সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তাররা তাকে কথা বলতে নিষেধ করেছে। তাই আমরা কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করিনি।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা এর আগে ভিডিওটি পুরনো দাবি করে বলেছিলেন, তার এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয় জানতে চাইলে অবশ্য আগের কথা অস্বীকার করেন ইফতেখায়রুল। দাবি করেন, ‘না, এই রকম কথা আমি বলিনি। এই বিষয়টি ওসি বলেছে কি না আমি সিওর না।
গতকাল এই রকম বিষয় রিওমার (গুজব) ছড়ানো হয়েছিল। আমি সেই জায়গা থেকে বলেছিলাম এই রকম অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। আমি জিসিনটা জানি না অফিসিয়ালি জানলে জানাব।’
‘ঘটনার সময় আহত শিক্ষার্থীর নাম রাব্বি বলা হয়েছিল। পরে জানতে পেরেছি তার নাম ফয়সাল। আর এই রকম ঘটনা ঢাকা মেডিকেল এলাকায়ও ঘটেছিল। তাই আমার বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখা দেওয়া হয়েছে।’
এসি ইফতেখায়রুল জানান, পিকআপ ভ্যানটি তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত আটক করতে পারেননি। তবে সিটিটিভির ফুটেজ দেখে গাড়িটির নম্বর শনাক্ত করতে পেরেছেন তারা।