জুনে তোড়জোড় জুলাইয়ে ঢিমেতাল
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে প্রতি অর্থবছরের শেষে বিশেষ করে জুন মাসে একেবারে ঝড়ের বেগে কাজ হয়। কাজের গতি এতটাই থাকে যে বছরের মোট বাস্তবায়িত কাজের এক—তৃতীয়াংশের বেশি হয় শুধু জুনেই।
অর্থবছরের শেষের এ মাস পেরিয়ে গেলেই যেন ঘুমিয়ে পড়ে দেশের উন্নয়নকাজ। আর কম কাজ করার ক্ষেত্রে রেকর্ড হয় জুলাইয়ে। কয়েক বছর ধরে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে এ অবস্থা দেখা যাচ্ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরের শুধু জুন মাসে যেখানে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ২২.৪৪ শতাংশ কাজ হয়েছে আর ব্যয় হয়েছে ৫৩ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। সেখানে জুলাইয়ে কাজ হয়েছে মাত্র ১.২৭ শতাংশ। আর খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। গত ১০ বছরে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন চিত্রের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বছরের শুরুতে অবহেলার কারণে বছর শেষে তড়িঘড়ি করে এডিপি বাস্তবায়নের প্রবণতা থাকে। এতে প্রকল্পের গুণগত মান রক্ষা করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। নির্ধারিত সময়ে কাজ না হওয়ায় অনেক সময় প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বেড়ে যায়।
অর্থবছরের শুরুতে কাজ কম হওয়ার বিষয়ে সাবেক আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছে, ‘অর্থবছরের শুরুতে সাধারণত প্রকল্পের সারা বছরের কাজের পরিকল্পনা নিতে হয়। বিভিন্ন ধরনের পেপারওয়ার্ক থাকে। টেন্ডারের বিষয় থাকে, ক্রয় প্রস্তুতির বিষয় থাকে। এসব কাজে তো তেমন অর্থ খরচ হয় না। এসব কারণে অর্থবছরের শুরুতে কাজ হলেও অর্থ ব্যয় না হওয়ায় এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যায়। তবে এবার দেখবেন প্রথম প্রান্তিকের পর প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগোবে।’
এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মিজ্জর্া আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আগে থেকে প্রস্তুতি না নিয়ে বাজেট পাস হওয়ার জন্য বসে থাকে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো। পাসের পর বিভিন্ন পেপারওয়ার্ক, টেন্ডারিং, অনুমোদন এসব করতেই বছরের অর্ধেক চলে যায়। তারপর দেখা যায়, বছরের শেষে তাড়াহুড়ো করে কাজ করে। তখন কাজের মান খারাপ হয়, তদারকি থাকে না। ফলে ব্রিজ করলে দেখা যায় তিন মাস পরই ভেঙে পড়ে। রাস্তা করলে দুই মাস পর ঢালাই উঠে যায়।’