চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যা, লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী
গত তিন দিনের টানা বর্ষণে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়িতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে এসব উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পানিবন্দী ও গৃহহারা হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বন্যার পানির তোড়ে এক যুবক নিখোঁজের পাশাপাশি প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতিরও খবর পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাটহাজারী উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়নের আঞ্চলিক সড়ক, অসংখ্য ঘরবাড়ি, মাছ চাষের পুকুর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। হালদা নদী সংলগ্ন একাধিক স্পটে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যার পানি আরো বাড়ছে।
এছাড়াও হাটহাজারী-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক, হাটহজারী-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক ও হাটহাজারী অক্সিজেন মহাসড়কের ছয় স্থানে মহাসড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার কারণে মঙ্গলবার দিনভর এই তিন মহাসড়কে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটেছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তার উননেছা শিউলী জানান, উপজেলা প্রশাসন প্লাবিত এলাকায় দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে বন্যা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও জেলা প্রশাসনের নিকট ত্রাণের আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে রাউজানে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দী রয়েছে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ইউনিয়নগুলোর মধ্যে রয়েছে- হলদিয়া, ডাবুয়া, চিকদাইর, গহিরা, নোয়াজিষপুর, পুর্ব গুজরা ও রাউজান ইউনিয়ন।
রাউজান পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে মাটির গুদাম ও কাঁচা বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক কোমড় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার দিনভর যান চলাচল বন্ধ ছিল। যান চলাচল বন্ধ থাকায় জলমগ্ন এলাকা অতিক্রম করে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য রিকশা, ভ্যান গাড়ি, পাওয়ার টিলার সংযুক্ত ট্রলি ও চাঁদের গাড়ির উপর ভরসা করছেন যাতায়াতকারীরা।
এদিকে বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। তিনি ডাবুয়া ইউনিয়ন, হলদিয়া ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় দুর্গতদের উপজেলা পরিষদ কর্তৃক ঘোষণা করা অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে উঠার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, যতদিন বাড়ি ঘরে পানি থাকবে, ততদিন সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন রেজা জানান, অব্যাহত প্রবল ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ী ঢলে মারাত্মক বিপর্যস্ত রাউজানের ছয়টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ড।
তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন একটি কন্ট্রোল রুম চালু রেখেছে। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে অবস্থান করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে জেলার ফটিকছড়ি জুড়ে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। তিন দিনের অবিরাম বৃষ্টি ও হালদা-সর্তা-ধুরুং খালের বাঁধ ভেঙে পরিস্থিতি ক্রমে অবনতির দিকে এগুচ্ছে। উপজেলার প্রায় ১২টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার প্রায় অর্ধশত গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অর্ধশত গরু ও ছাগল। নষ্ট হয়েছে আমন ধানের বীজতলা ও পুকুরের মাছ।
এছাড়া বন্যার পানির তোড়ে এক যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। নাজিরহাট-মাইজভান্ডার সড়কের সমশুর দোকান সংলগ্ন এলাকায় তৈয়ব নামক (২৮) এক যুবক পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যায় বলে জানায় এলাকাবাসী। তিনি পূর্ব ফরহাদাবাদ কদল তালুকদার বাড়ির বাসিন্দা।
নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর ও নাজিরহাট পৌর প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলীও।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন স্কুল-কলেজে বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে এবং সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে বলে জানিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নারায়ণহাট গেজ স্টেশন কর্মকর্তা খুরশিদ আলম জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পানি উচ্চতা ছিল ১৬.৮৬ সে.মি। হালদা নদীর পানি বিপদসীমার ৫.৯০ সে.মি. উপর দিয়া প্রবাহিত হচ্ছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ২৬৫.০ মিলি মিটার রেকর্ড হয়েছে।-ইউএনবি