ইসনাইন (সোমবার), ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

গুপ্তধন খুঁজতে ব্যবহার করা হবে গ্রাউন্ড রাডার ও স্ক্যানার প্রযুক্তি

গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীতে আলোচিত মিরপুরের একটি বাড়িতে গুপ্তধনের খোঁজে পুলিশি অভিযানের কথা। প্রথম দিনের খোঁড়াখুড়ি শেষে কিছু না পাওয়ায় আপাতত স্থগিত আছে সেই অভিযান। বৃষ্টি শেষে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে নতুনভাবে অভিযান শুরুর ঘোসণাও দিয়েছে সেই পুলিশ। কিন্তু কী সেই নতুন প্রযু্ক্তি? চলুন জেনে নেয়া যাক।

২০ জন শ্রমিকের সহায়তায় ছয় ঘণ্টা ধরে সাড়ে চার ফুট গভীরে ফলশূন্য খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে মিরপুর-১০ নম্বরের সি-ব্লকের বাড়িতে কথিত ‘গুপ্তধন’ উদ্ধার অভিযান আপাতত স্থগিত রয়েছে। জেলা প্রশাসন বলছে, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে দুই থেকে চার দিনের মধ্যে আবারও অভিযান শুরু করা হবে। তবে নতুন অভিযানে ‘গুপ্তধন’ খুঁজতে গ্রাউন্ড রাডার অথবা ‘স্ক্যানারেই ভরসা রাখতে চান সংশ্লিষ্টরা।

ওই বাড়ির মেঝের নিচে সত্যিই ‘গুপ্তধন’ আছে কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত কোনও তথ্য নেই। অন্যদিকে, মাটি খননের পরও কথিত ‘গুপ্তধন’ না পেয়ে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন।

ভূতত্ত্ব ও পরিবেশবিদরা বলছেন, যেসব জায়গা খোঁড়াখুঁড়ির অনুপযোগী অথবা ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব জায়গায় প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। কিন্তু মিরপুরের ওই বাড়িতে প্রযুক্তি ব্যবহারের আগেই খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে, যেখানে কিছুই পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের বিশেষজ্ঞরা জানান, যদি মাটির নিচে মেটাল জাতীয় কিছু থাকে, তবে স্ক্যান করলে সেটি বোঝা যাবে বা ধরা পড়বে।

আবার ‘গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার (জিবিআর)’ দিয়ে মাটির ওপর থেকেও দেখা হয়। যদি নিচে কোনও কঠিন বস্তু থাকে, তবে ওই মেশিনে সেটার সংকেত দেবে।

তবে দুটি প্রযুক্তিই কাদা মাটিতে কম কার্যকর। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দুটি পদ্ধতি কাজ করবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহে রয়েছে খোদ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরই।

গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার (জিবিআর) ও স্ক্যানারের কার্যক্রম সম্পর্কে অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, এই স্ক্যানারটি ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন, সংযোগ তার, কোনও ফাটল শনাক্তকরণ, জনপথ ও রেলপথের গুণগত মান নির্ণয়, সেতুর ভিত্তি পরীক্ষা, বিপজ্জনক বর্জ্য মানচিত্রায়ন, ভুগর্ভস্থ সংরক্ষণাধার শনাক্তকরণ, স্তরতাত্ত্বিক বিন্যাস নির্ণয়, ভূগর্ভস্থ ফাটল ও পানি শনাক্তকরণ, প্রত্নতত্ত্বগত ক্ষেত্রে সাইট মানচিত্রায়ন, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শনাক্তকরণের মতো কাজে ব্যবহার করা হয়।

এই যন্ত্রটি কতদূর পর্যন্ত কাজ করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. রেশাদ মহম্মদ ইকরাম আলী বলেন, ‘এটি মেটাল ডিসটেন্স ও ওয়াটার কন্টেন্টের ওপর নির্ভর করবে। যদি শুকনো মাটি থাকে, তবে তিন থেকে পাঁচ মিটার পর্যন্ত এটি কাজ করবে। যদি এর মধ্যে ভেজা মাটি বা পনি থাকে তবে সেটি কাজ করবে না। কারণ, পানি থাকলে তা ভালো করে বোঝা যাবে না, সিগন্যাল বাধাগ্রস্ত হবে।’

২১ জুলাই (শনিবার) রাজধানীর মিরপুর-১০ এর সি-ব্লকের ১৬ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে গুপ্তধনের খোঁজে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করে প্রশাসন ও পুলিশ। বাড়িটির  নিচে কমপক্ষে দুই মণ স্বর্ণালংকার আছে; এমন দাবি ওঠায় এর সত্যতা নিশ্চিত করতে শুরু হয় এই অভিযান। বাড়ির ভিত্তিপ্রস্তর দুর্বল হওয়ায় খোঁড়াখুঁড়ি স্থগিত রাখা হয়েছে। এরপর পুনরায় ২২ জুলাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।

Facebook Comments Box