গম উৎপাদনে খরচ বাড়লেও মিলছে না ন্যায্য দাম
পঞ্চগড় সংবাদদাতা: দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চা, ধান, পাট ও ভূট্টা চাষের পাশাপাশি দিন দিন অর্থকরী ফসল হিসেবে গমের ফলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়া আর চাষ উপযোগী মাটি হওয়ায় কৃষকেরাও ঝুঁকেছেন গমে। এতে দিন দিন গমের আবাদ বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদনও। কিন্তু বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরে নায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ গমচাষিরা।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষকরা তাদের জমি থেকে গম উত্তোলন ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেক কৃষক আবার তাদের উৎপাদিত গম মাড়াইয়ের পর শুকিয়ে বিক্রির জন্য বাজারে গিয়ে বিক্রি করে বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে গমে খরচ বাড়লেও প্রত্যাশিত মূল্য না পেয়ে অনেকেরই লোকসান হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, আবহাওয়া অনুকূল, পরিমিত বৃষ্টি আর দীর্ঘস্থায়ী শীত ও কুয়াশা না পড়ায় বিগত বছরের তুলনায় এ বছর জেলার সদর, তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জসহ ৫ উপজেলায় গমের ফলন ভালো হয়েছে। চলতি বছরে জেলায় মোট ২১ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৩ হাজার হেক্টর বেশি।
তবে সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলায় গমের চাষ বেশি হয়েছে দাবি করছেন চাষিরা। সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছ থেকে সার ও বীজ পাওয়ার সুবিধার কথাও বলছেন তারা।
এদিকে গমচাষিরা জানান, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর বীজ, সার, কীটনাশক, ডিজেল, সেচ, শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। গমের জমি প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে গম কাটা-মাড়াইয়ের খরচও আগের চেয়ে বেশি। বাজারের প্রতিমণ গম বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে ৮৫০ টাকা দরে। ভালো গমের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা। গতবার প্রতিমণ গম বিক্রি হয়েছে ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকা। এবার বেশি টাকা খরচ করে লাভের আশায় গম চাষ করে দুশ্চিন্তায় আছেন হাজার হাজার কৃষক।
তাদের দাবি, গমের দাম বাড়ানো না হলে লোকসান গুনতে হবে। সেই লোকসানের প্রভাব পড়বে আগামী বছর। গমের উৎপাদন যাতে না কমে এ জন্য দামের ব্যাপারে ব্যবসায়ীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা চাইছেন তারা।
তেঁতুলিয়া উপজেলার সাতমেড়া এলাকার কৃষক আব্দুল করিম বলেন, গত বছর গমের দাম ভালো পাওয়ায় এবার ৩ বিঘা জমিতে গমের চাষ করেছি। তবে গতবারের চেয়ে এবার খরচ দিগুণ হয়েছে। আবার ফলনও ভালো পেয়েছি। কিন্তু বাজারে গমের দাম নেই। কৃষকরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত। এখন লাভ তো দূরের কথা মূলধন তোলা নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছি।