সাবত (শনিবার), ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

‘কেয়ামত পর্যন্ত’ যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি দেবে না: তোফায়েল

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সকল শর্ত পুরণ করলেও রোজ কেয়ামত পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেবে বলে মনে হয় না। তারা নতুন নতুন শর্ত দিতেই থাকবে।

তিনি বলেন, ‘তাই জিএসপি নিয়ে যত কম ভাবা যায় ততই ভাল। জিএসপি সুবিধা বহালে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই যথেষ্ট।’

মঙ্গলবার দশম জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা বন্ধ প্রসঙ্গে সরকারি দলের সিনিয়র সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে একথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, ‘রানা প্লাজা ধ্বসের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে দেয়। তারা বাংলাদেশের ওপর ১৬টি শর্তারোপ করে। একটি স্বাধীন দেশের ওপর অন্য একটি দেশ কখনোই কোনো শর্তারোপ করতে পারে না। এর পরেও আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া সবগুলো শর্তই পূরণ করেছি।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে বলেছে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। তবে আরো উন্নতি করতে হবে। আমরা জানি না সেটি আর কী হতে পারে?

এসময়ে তিনি বলেন, আসলে কেয়ামত পর্যন্ত আমরা শর্ত পূরণ করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক শর্ত দিতেই থাকবে। তাহলে আমরা কী করে সেটা পূরণ করবো? এটার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। আর জিএসপি না পেলেও আমাদের কোনো ক্ষতি নেই।

বাংলাদেশ এখন পোশাক শিল্প রপ্তানিতে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাবই।

বিএনএফের সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ‘বিশ্বের মধ্যে চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। বর্তমানে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৭ হাজার ৪২৪ এবং ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৫ হাজার ২৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সকল দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৈষম্য হ্রাসে সরকার বহুবিধা কার্যক্রম বাসত্মবায়ন করছে।

তিনি আরো জানান, চীন থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৭৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিপরীতে আমদানি ব্যয় হয়েছে সর্বাধিক ৮ হাজার ২১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৭ হাজার ৪২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া ভারতে ৫২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের বিপরীতে আমদানী ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৮১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেই হিসেবে দেশটির সঙ্গে বর্তমানে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৫ হাজার ২৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ওই দুই দেশ ছাড়াও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ২ হাজার ১০৩, ইন্দোনেশিয়ায় ১ হাজার ৩১৩, মালয়েশিয়ায় ১ হাজার ১৪৭ এবং কোরিয়া রিপাবলিকের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৯৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

মন্ত্রী জানান, যে সকল দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বৈষম্য হ্রাস এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বর্তমান সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার ইতোমধ্যে কয়েকটি আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই সকল আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় বাংলাদেশ ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের ২৮টি দেশসহ বিশ্বের মোট ৫২টি দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্য বৈষম্য হ্রাসে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য চুক্তিটি এমনিভাবে সংশোধন করা হয়েছে যাতে ভারতের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দেশ যথা নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহণ করা যায়।

তোফায়েল আহমেদ আরো জানান, আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপালের মধ্যে বিদ্যুত, পানি সম্পদ, ট্রানজিট ও কানেকটিভিটি বিষয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রম্নপ গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মায়ানমারকে নিয়ে আঞ্চলিক বাণিজ্য জোট গঠন করা হয়েছে, যা এ অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

Facebook Comments Box