কুষ্টিয়ায় কুরআন শরীফে পা রেখে ও আল্লাহ পাককে নিয়ে আপত্তিকর কথা বললো এক তরূনী, প্রতিবাদের ঝড়।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাইশা তান্যুশকা ইমু (২৩) নামের এক তরুনী মহান আল্লাহকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য ও পবিত্র কোরআন শরীফে পা রেখে তার ছবি নিজ ফেসবুক পেজে পোষ্ট করার ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ধর্মপ্রান মুসল্লীরা । কুষ্টিয়া জেলা শহরের বিভিন্ন মোড়ে সকল বয়সের ইসলাম ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে এই ঘটনার প্রতিবাদে দিনব্যাপি বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ হয়েছে।
জানা যায়, কুমারখালী পৌর শহরের ৩ নং ওয়ার্ডের এলঙ্গী পাড়া (তমিজ মোড়) এলাকার আব্দুর রশিদের মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা মাইশা তান্যুশকা ইমু (২৩) তার ফেসবুক পেজে গত মঙ্গলবার বিকালে মহান আল্লাহকে নিয়ে আপত্তিকর লেখা ও পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনের উপর ২টি পা রাখা ছবি পোষ্ট করে। ঐ ছবিতে একজন পুরুষ ও একজন মেয়ের পা পরিলক্ষিত হয়। বিষয়টি দ্রূত ফেসবুকে শেয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদের ঝড় উঠতে শুরু করে। সন্ধ্যায় শত শত প্রতিবাদকারী তমিজ মোড়ে ইমুর পিতার বাড়ির সামনে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। কুমারখালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ইমুকে আটক করে এবং তার মা-বাবাসহ থানায় নিয়ে আসে।
এর আগে মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে উপজেলার এলাঙ্গীর তাজিম মোড় এলাকার নিজ বাড়ি থেকে অভিযুক্ত তরুনীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । ইমা ওই এলাকার রাশেদ রানার মেয়ে। কুমারখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অমৃত কুমার বিশ্বাস বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে সংবাদ আসে কুমারখালীর এলাঙ্গীর তাজিম মোড় এলাকায় মহান আল্লাহ ও পবিত্র কোরআন শরীফ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য করে স্ট্যাটাস দেয়ায় মাইশা তানুসকা ইমা (২০) নামের এক তরুণীর বাড়ি ঘিরে রেখেছে স্থানীয়রা। পুলিশ এ সংবাদে ইমার বাড়ি পৌঁছে তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বিষয়টি স্বীকার করে। পরে পুলিশ তাকে আটক করে ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করে।
এদিকে এই ন্যাক্কার জনক ঘটনার সাথে ইমুর বন্ধু কুমারখালী থানার পুলিশ কনস্টেবল তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে তামিম (২৩) জড়িত আছে বলে পুলিশের কাছে ইমু প্রাথমিক ভাবে স্বীকার করেছে। পুলিশ আরো জানায়, ইমুর ফেসবুক আইডি তার বন্ধু তামিম অথবা অন্য কেউ হ্যাক করে এই ছবি ও আপত্তিকর বক্তব্য পোষ্ট করে থাকতে পারে। তবে বিষয়টি প্রমানের জন্য ইমুর মোবাইল সেট ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এদিকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশের ছেলে তামিম পলাতক আছে। পুলিশ জানায়, তামিমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে বুধবার বিকালে শহরের বিভিন্ন মোড়ে সর্বস্তরের জনতা ইমু ও তামিমের কঠোর শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। তবে এ সময় পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান অরুন এবং পৌর জামায়াতের আমির ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভ মিছিলটি উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়।
পূর্ব থেকেই উপজেলা পরিষদে উপস্থিত থাকা কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন ও পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম প্রতিবাদকারী জনতার সাথে দুই দফা খোলামেলা কথা বলেন। তিনি প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই জঘন্য ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানার অপরাধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি সকলকে শান্ত থাকার আহবান জানান। এ সময় পুলিশ সুপার পুলিশ সদস্য তোফাজ্জেল হোসেনকে ছেলের অপরাধের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আশ্বাসে প্রতিবাদকারী হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা বিক্ষোভ মিছিল করতে করতে ফিরে আসে।