কারাবিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়া ডিভিশন পাননি
রোববার ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে কারা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, কারাগারে প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা (ডিভিশন) পাওয়ার যে দুটি ‘ক্রাইটেরিয়া’ দেওয়া রয়েছে, তার কোনোটিতেই খালেদা জিয়া পড়েন না।
কারাবিধির ৬১৭ উপবিধিতে বলা হয়েছে শুধু সাবেক রাষ্ট্রপতির কথা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথা সেখানে নেই।
আর কারাবিধি অনুযায়ী সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের সংসদ সদস্য, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পেতে পারেন। বিএনপি যেহেতু সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে না, সেহেতু খালেদা জিয়াকে সেভাবেও বিবেচনা করছে না কারা কর্তৃপক্ষ।
ইফতেখার উদ্দীন বলেন, “প্রাথমিক রেকমেন্ডেশন কোর্ট থেকে আসে।… যেহেতু ৮ তারিখের রায়ের সাথে রেকমেন্ডেশন আসেনি, তাই তাকে জেল কোড অনুযায়ী যেটা আছে, আপাতত সে অনুযায়ী সাধারণ বন্দি হিসেবেই রাখা হয়েছে।”
খালেদা জিয়াকে কয়েদীর পোশাকে রাখা হয়েছে কি না- এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, “কারা বিধি অনুযায়ী কয়েদীদের কারাগারের পোশাকই পড়ার কথা।”
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। রায়ের পরপরই তাকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরদিন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও কারাগারে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে সাধারণ বন্দির মত।
এরপর খালেদার আইনজীবীরা রোববার আদালতে ডিভিশন চেয়ে আবেদন করলে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান এ বিষয়ে কারাবিধি অনুযাযী ব্যবস্থা নিতে বলেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইফতেখার উদ্দীন বলেন, “আইনজীবীরা একটা দরখাস্ত দিয়েছন। আমি সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। টিভিতে দেখেছি একটা অর্ডার হয়েছে কোর্ট থেকে। সেটা হাতে পেলে তখন বিধি অনুযায়ী ব্যবস্খা নেব।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আদালতের একটি দিক নির্দেশনা হয়েছে, আমরা কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি। আদালতের সেই দিক নির্দেশনা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”
তবে খালেদা জিয়া যেহেতু সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সে দিকটি খেয়াল করে এরই মধ্যে ‘আনঅফিসিয়ালি অনেক ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
খালেদা জিয়ার সেবায় তার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমও কারাগারে রয়েছেন বলে যে খবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে এসেছে, তা নাকচ করে কারা মহাপরিদর্শক ইফতেখার উদ্দীন বলেন, “ফাতেমা নামে কেউ সেখানে নেই। পুলিশ একজনকে দিয়ে গিয়েছিল, এক ঘণ্টা পর আমরা ফেরত পাঠিয়েছি।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে যেহেতু সাধারণ বন্দির মতই রাখা হয়েছে, সেহেতু তাকে সে অনুযায়ীই খাবার দেওয়া হচ্ছে। তবে আত্মীয়রা যে খাবার দিয়েছেন, তা তাকে দেওয়া হয়েছে।”
আর ‘বেসিক হিউম্যান রাইটস’ হিসেবে সাধারণ ও ডিভিশনপ্রাপ্ত সব আসামিই চিকিৎসা সেবা পান। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক একজন ডাক্তার ও একজন নার্স রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনা হবে বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক।
নাজিম উদ্দিন রোডে ২২৮ বছরের পুরনো ঠিকানা থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ২০১৬ সালে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। খালেদা জিয়াই সেখানে এখন একমাত্র বন্দি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইফতেখার উদ্দীন বলেন, “সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশেষ কারাগার হিসেবে সেখানে রাখা হয়েছে। সরকার যেহেতু এখনও ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেনি. তাই এটাকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কাশিমপুর মহিলা কারাগারে রাখলে এই বয়সে প্রিজন ভ্যানে করে আনা নেওয়ায় উনার অসুবিধা হত। তাই বয়স ও শারীরিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাকে এখানে রাখা হয়েছে।”
রায়ের পর খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছিল পুরনো কারাগারের মূল ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে, যা আগে একজন কারা কর্মকর্তা ব্যবহার করতেন। এখন তাকে সেখানে থেকে দোতলার অন একটি কক্ষে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারাগারের ডিআইজি তৌহিদুল ইসলাম। দোতলার ওই কক্ষটি এক সময় ব্যবহৃত হত কারাগারের ডে কেয়ার সেন্টার হিসেবে।