ওবামার আগ্নেয়াস্ত্র নীতির বিরুদ্ধে রক্ষণশীলেরা
প্রতিদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ৮৯ জন মানুষ বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়। প্রতিবছরে বন্দুকের গুলিতে নিহত মানুষের সংখ্যা ৩২ হাজারেরও বেশি। প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ নিহত হয় এই সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই অর্থহীন মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচার ওপর নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন।
দেশের রক্ষণশীল মহলে, বিশেষ করে কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলোতে ওবামার প্রস্তাব এর মধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেসের মাধ্যমে আইন পাশের বদলে নির্বাহী আদেশের পথ বেছে নেওয়ায় ওবামা রিপাবলিকান রাজনীতিকদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, মার্কিন শাসনতন্ত্রের দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রতিটি মার্কিন নাগরিককে অস্ত্র বহনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। রিপাবলিকানদের অভিযোগ, ওবামা এই অধিকার হরণ করতে চান।
গতকাল বৃহস্পতিবার ওবামা ভার্জিনিয়ার জন মেইসন ইউনিভার্সিটিতে এক উন্মুক্ত সভায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে ও বিপক্ষে এমন ১০০ জন আমন্ত্রিত দর্শকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন। সিএনএনে সরাসরি প্রচারিত এই টাউনহল মিটিংয়ে ওবামা জোর দিয়ে বলেন, অস্ত্র বহনের অধিকার রদ করা তাঁর লক্ষ্য নয়।
জনমত গণনায় অস্ত্র বিক্রির আগে ক্রেতার পরিচয় জানার পক্ষে সমর্থন থাকলেও রক্ষণশীল রাজনীতিকদের প্রবল বিরোধিতায় অস্ত্র বিক্রিতে কার্যকর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ সম্ভব হয়নি। তিন বছর আগে মার্কিন কংগ্রেসে আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচার আগে ক্রেতার পরিচয় নির্ণয়ের প্রস্তাব করে একটি আইন উত্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু যথেষ্ট সমর্থনের অভাবে সেই আইন পাস হয়নি। কংগ্রেসের কাছ থেকে কোনো সমর্থন পাবেন না জেনেই ওবামা আইন পরিষদকে পাস কাটিয়ে নির্বাহী আদেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ওবামার এই নির্বাহী আদেশের ফলে সামান্যই পরিবর্তন হবে। তা সত্ত্বেও রিপাবলিকান নেতারা কঠোরভাবে ওবামার সমালোচনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী সিনেটর ক্রুজ তাঁর সমর্থকদের কাছে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় বলেন, ‘ওবামা আপনাদের বন্দুক কেড়ে নিতে চান।’ আরেক রিপাবলিকান মনোনয়নপ্রত্যাশী সিনেটর মার্কো রুবিও বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে প্রথম কাজই হবে ওবামার নির্বাহী আদেশ বাতিল করা। জনমত গণনায় এগিয়ে থাকা রিপাবলিকান মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের আশ্বাস দিয়েছেন, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টা সফল হবে না। শাসনতন্ত্র যে অধিকার নিশ্চিত করেছে, তা কেড়ে নিতে দেওয়া হবে না।
ওবামা আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন, এমন প্রচারের কারণে গত কয়েক মাসে আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির পরিমাণ হু হু করে বেড়ে গেছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে যত আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি হয়েছে, তা গত দুই দশকে পূর্ববর্তী যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি। একজন ভাষ্যকার মন্তব্য করেছেন, ওবামা হলেন আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির সেরা ‘সেলসম্যান।’
আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি নিয়ন্ত্রণে ওবামার নেওয়া উদ্যোগ প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছে। জনমেইসন বিশ্ববিদ্যালয়ের টাউন হল মিটিংয়ে এক দর্শনার্থীর কথায় তার প্রমাণ মেলে। দর্শকদের মধ্যে একজন মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ওবামা কেন তাঁর কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিতে চান। সঙ্গে অস্ত্র থাকলে তিনি বেশি নিরাপদবোধ করেন।
নিউইয়র্ক টাইমসে স্বনামে লিখিত এক উপসম্পাদকীয়তে ওবামা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির আগে ক্রেতার পরিচয় নির্ণয়ের পক্ষে। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে বেশি সতর্কতার কথা উল্লেখ করে ওবামা বলেন, ‘ওষুধের বোতল যাতে শিশুরা খুলতে না পারে, আমরা সে ব্যবস্থা নিই। অথচ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সতর্কতাই নেই।’
একই উপসম্পাদকীয়তে ওবামা আরও বলেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটন একসময় আগ্নেয়াস্ত্র প্রশ্নে ওবামার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তবে চলতি দফা নির্বাচনে তিনি তাঁর প্রস্তাবের পক্ষে জোর সমর্থন দিয়েছেন। অবশ্য কৃষিপ্রধান অঙ্গরাজ্যগুলোতে যেসব ডেমোক্রেটিক প্রার্থী এ বছর নির্বাচনে কংগ্রেস ও সিনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাঁরা বেশির ভাগই ওবামার এই নির্বাহী আদেশ হয় উপেক্ষা করবেন, নয়তো তার সরাসরি বিরোধিতা করবেন বলে জানা গেছে।