খামিছ (বৃহস্পতিবার), ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ইউনিভার্সাল গ্রুপের ২৭০ কোটি টাকা কর ফাঁকির ১২ মামলা সাত মাসেও সচল হয়নি

নিউস ডেস্ক :-  ইউনিভার্সাল গ্রুপের বিরুদ্ধে ২৭০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে দায়ের করা মোট ১২টি মামলা ধামাচাপার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, মামলা দায়েরকারী কর্মকর্তাকে কৌশলে সরিয়ে দেওয়ারও নানা চেষ্টা চলছে।


প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ইউনিভার্সাল গ্রুপকে এ কাজে মদদ দিচ্ছেন রাজশাহী বিভাগীয় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কোনো কোনো কর্মকর্তা।

গত জুলাইয়ে এসব মামলা করা হলেও এখন পর্যন্ত তদন্তের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউনিভার্সাল গ্রুপের একাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে পাবনা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে।

বিশেষ করে এ গ্রুপ খাওয়ার স্যালাইন, বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ‘আগ্রা’ ও তরল পণ্য উৎপাদন করে থাকে। এছাড়া আমদানি-রপ্তানি, হোটেল-রিসোর্ট ব্যবসা ছাড়াও নানাবিধ ট্রেডিং কর্মকাণ্ড রয়েছে। এ গ্রুপের বিভিন্ন পণ্য বিদেশেও রপ্তানি হয়।

গ্রুপটির বিরুদ্ধে ২৬৯ দশমিক ১৭ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ১২ জুলাই ৯টি ও ১৫ জুলাই তিনটিসহ মোট ১২ মামলা দায়ের করেন পাবনা কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ইউনিভার্সাল গ্রুপের শিল্পকারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের নথিপত্র পর্যালোচনা, ব্যবসা পরিচালনা ও সামগ্রিক লেনদেনের সব নথিপত্র ও কম্পিউটারাইজড ডকুমেন্টস অনুসন্ধান করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে। নিয়মানুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে মামলাগুলোর কার্যক্রম চালুর বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানোর কথা থাকলেও সাত মাসেও পাঠানো হয়নি। ফলে মামলাগুলোর কার্যক্রম সচল হয়নি।

উলটা রাজশাহীর কাস্টমস কমিশনার লুৎফর রহমান মামলা দায়েরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসামিদের একটি অভিযোগ দ্রুততার সঙ্গে তদন্তের ব্যবস্থা করেন। যদিও তদন্তে ইউনিভার্সাল গ্রুপের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। জানা যায়, ইউনিভার্সাল গ্রুপের অধীন পাবনার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেড, তরঙ্গ প্যাকেজিং, তরঙ্গ ট্রেডার্স ও রত্নদ্বীপ রিসোর্টে ৯ জুলাই কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের একটি প্রিভেন্টিভ টিম উপকমিশনার জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানকালে মাসিক ভ্যাট ও কর রিটার্নের নথিপত্র, ক্রয়-বিক্রয় চালান, আমদানি রপ্তানি ও বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ বাণিজ্যিক নথিপত্র ছাড়াও কম্পিউটারের সিপিইউ জব্দ করা হয়।

এসব নথিপত্র বিশ্লেষণ করেই গ্রুপটির বিরুদ্ধে ২৭০ কোটি টাকা কর, ভ্যাটসহ রাজস্ব ফাঁকির মামলাগুলো হয়। ২০১৫ থেকে ২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত মোট পাঁচটি অর্থবছরে এই পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটন করেন শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের উপকমিশনার জাহিদুল ইসলাম বলেন, যথাযথ নথিপত্র বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েই ইউনিভার্সাল গ্রুপের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির মামলাগুলো করা হয়েছে। এসব মামলার বিষয়ে এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।

এ বিষয়ে তার আর কিছু বলার নেই। রাজস্ব ফাঁকির মামলাগুলো চলমান পরিস্থিতি জানতে গত রোববার দুপুরে রাজশাহী শুল্ক কমিশনারেটের কমিশনার লুৎফর রহমানের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার দপ্তরে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে। কারণ কমিশনার সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ। বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মির্জা সহিদুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি রাজি হননি।

বিপুল রাজস্ব ফাঁকির ১২টি মামলা প্রসঙ্গে জানতে ইউনিভার্সাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানী হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে পরিচয় জেনে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে তিনি খুদেবার্তা পাঠান। সেখানে লেখা আছে, ‘দুঃখিত আমি আপনার সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারছি না।’

Facebook Comments Box