খামিছ (বৃহস্পতিবার), ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

অস্ট্রেলিয়ায় এ বছরই সরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানি

চলতি বছরের যে কোনো সময় বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়াতে সরকারিভাবে সীমিত পরিসরে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজধানী ক্যানবেরাতে দায়িত্বরত বাংলাদেশ হাইকমিশনার কাজী ইমতিয়াজ হোসেন।

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় হাইকমিশনার জানান, ইতোমধ্যে ঢাকায় সিলেকশন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি কয়েক মাস আগে দ্বিপাক্ষিক সফরে এদেশে আসেন এবং অস্ট্রেলিয় কর্তৃপক্ষের সাথে তার ফলপ্রসু আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং হাইকমিশনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় নতুন এই দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে।

সিনিয়র কূটনীতিক কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘খুব ছোট পরিসরে হলেও ওয়েল্ডার এবং ইলেকট্রিশিয়ানসহ বিশেষ কিছু কাজের জন্য রিকুইজিশন ইতোমধ্যে আমরা এখানে পেয়েছি। বাংলাদেশ সরকারের তত্বাবধানে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে রিক্রুটমেন্টের প্রথম পর্যায়ে  সিলেকশনের একটা প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আশা করছি এ বছরই তার সূচনা হবে।’

হাইকমিশনার আরো বলেন, ‘পয়েন্ট অ্যান্ড মেরিট সিস্টেমে স্কিল্ড পর্যায়ে আমাদের প্রফেশনালদের এদেশে আসার প্রক্রিয়া তো আগে থেকেই চালু ছিল এবং এখনো আছে। তবে অদক্ষ এবং আধাদক্ষদের দক্ষ করে তোলার মধ্য দিয়ে তথা আমাদের কর্মীদের স্কিলকে ডেভেলপ করে অস্ট্রেলিয় শ্রমবাজারের চাহিদার আলোকে নতুন উদ্যমে আমরা কাজ শুরু করেছি।’

পেশাদার ডিপ্লোম্যাট কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘এখানকার ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোর সাথে আমাদের দেশের ইনস্টিটিউট সমূহের একটা মেলবন্ধন রচনা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আমাদের হাইকমিশনের তরফ থেকে। এদের কারিকুলাম ও ট্রেইনিং মডিউলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদেরটা সাজানোর উপর জোর দিচ্ছি। এতে করে অস্ট্রেলিয়ান জব মার্কেটে আমাদের কর্মীদের রিক্রুটমেন্টের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

হাইকমিশনার কাজী ইমতিয়াজ হোসেন

চলতি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের অস্ট্রেলিয়া সফরকালীন সময়ে দুই দেশের মধ্যকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘ফরেইন অফিস কনসালটেশন’ এফওসি অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান হাইকমিশনার ইমতিয়াজ। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা, এনার্জি সেক্টর এবং হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ছাড়াও মাইগ্রেশন ইস্যুতে বিশদ আলোচনা হয় পররাষ্ট্র সচিবের সফরের সময়। হাইকমিশনার আরো জানান, দুই দেশের মধ্যে একটি এমওইউ স্বাক্ষর হয়েছে এবং এখন থেকে এক বা দেড় বছরের নিয়মিত বিরতিতে দ্বিপাক্ষিক ‘ফরেইন অফিস কনসালটেশন’ এফওসি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সবচাইতে বেশি বাংলাদেশি অধ্যুষিত নগরী সিডনিতে চলতি বছরই পূর্ণাঙ্গ কনস্যুলেট অফিস স্থাপিত হতে যাচ্ছে বলে জানান হাইকমিশনার কাজী ইমতিয়াজ হোসেন। সিডনির পর অন্যান্য শহরেও একই পরিকল্পনা আছে বলেও জানান তিনি।

অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও নিউজিল্যান্ড ও ফিজির দায়িত্বে আছেন হাইকমিশনার ইমতিয়াজ। এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস বা মিশন খোলার পরিকল্পনা আপতত নেই তবে অকল্যান্ডে নতুন অনারারি কনসাল জেনারেল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।’

অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশের বিলিয়ন ডলারের চলমান দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ থাকার কথা জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, ‘চলতি অর্থবছরেও ট্রেন্ড বজায় থেকেছে এবং থাকবে।’

আকাশপথে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহনে অস্ট্রেলিয় সরকারের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে হাইকমিশনার জানান, বাংলাদেশ থেকে যদি আমরা পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারি তবে পর্যায়ক্রমে এরা অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেবে।

প্রসঙ্গত, নিরাপত্তাজনিত কারণে অস্ট্রেলিয় সরকার গত ১৬ ডিসেম্বর এক আদেশে সিরিয়া, মিসর, বাংলাদেশ, ইয়েমেন ও সোমালিয়া থেকে কিংবা এসব দেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিটের মাধ্যমে আকাশপথে পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যা এখনো বহাল রয়েছে। একই আশাবাদ ব্যক্ত করে হাইকমিশনার কাজী ইমতিয়াজ জানান, অস্ট্রেলিয় ক্রিকেট টিমও অচিরেই বাংলাদেশ সফর করবে এবং এ ব্যাপারে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের পাশাপাশি বাইরে থেকে আসা মেহমানদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক এফোর্টকে এখানকার কর্তৃপক্ষ এপ্রিশিয়েট করেছে।

Facebook Comments Box